পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

খড়কে-কাঠির মতো ছোটো হয়ে গেছে, কিন্তু তাতেই কাজ চলে গেল। মাছটা ছোট-ছোট করে বানিয়ে কতক-কতক হাঁসকে খাইয়ে দিয়ে, নিজে খেতে বসল। তার যকের মুখে কাঁচা মাছ নেহাত মন্দ লাগল না। রিদয়ের খাওয়া হলে খোঁড়া তাকে চুপি-চুপি বললে যে চক-নিকোবরের দল পোষা হাঁসকে হাঁসের মধ্যে গণ্য করে না। রিদয় চুপি-চুপি বললে—“তা তো দেখতে পাচ্ছি।”

 খোঁড়া হাঁস গলা-ফুলিয়ে বললে—“মজা হয়, যদি একবার এদের সঙ্গে সমানে আমিও মানস-সরোবর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারি। পোষা হাঁস কি করতে পারে তবে ওরা টের পায়।”

 “তা তো বটেই!” বলে রিদয় চুপ করলে।

 খোঁড়া বলে চলল—“আমার মনে হয় একলা আমি অতটা যেতে পারি কি না! কিন্তু তুমি যদি সঙ্গে চল, তবে আমি সাহস করি।”

 রিদয় ভেবেছিল এখান থেকেই সে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু হাঁসের ইচ্ছে শুনে সে একটু তা-না-না করে বললে—“দ্যাখো, আমার সঙ্গে তোমার বনবে কি? আমি তোমাকে আগে কত জালাতন করেচি।” কিন্তু রিদয় দেখলে হাঁস আগের কথা ভুলে গেছে, রিদয় যে তার প্রাণ বাচিয়েছে—জল খাইয়ে যত্ন করে, সেই কথাই সে খোঁড়া হাঁস মনে রেখেছে। একবার বাপ-মায়ের কথা তুলে রিদয় হাঁসকে বাড়ি ফেরাবার চেষ্টা করলে, কিন্তু হাঁস বললে—“কোনো ভাবনা নেই, আসছে-শীতে তোমায় আমি ঠিক বাড়িতে পৌছে দেব। তোমাকে ঘরের দরজায় নামিয়ে দিয়ে তবে আমার ছুটি। তার মধ্যে তোমায় একলা ছেড়ে আমি কোথাও নড়ব না—প্রতিজ্ঞা করছি!”

 রিদয় ভাবছে—মন্দ না! এই যক্ হয়ে মা-বাপের কাছে এখন না যাওয়াই ভালো! কি জানি, মানস-সরোবর থেকে হয়তো কৈলাসেও

৪১