পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ঠিক হবে’—বলে বিশ্বামিত্র একরাশ প্রজাপতির ডানা গড়ে রেখে বিশ্বকর্মাকে ডেকে বললেন—‘দেখসে মজা!’

 বিশ্বকর্মা ভেবেই পান না, এত ডানা নিয়ে বিশ্বামিত্র কি করবেন! তিনি শুধোলেন—‘এগুলো কি হবে ভাই?’

 বিশ্বামিত্র খানিক কপালে আঙুল বুলিয়ে চিন্তা করে বললেন—‘পাহাড়দের সব ডানা দিয়ে দিতে চাই, তারা যেখানে খুশি—শীতের সময় গরমদেশে, গরমের সময় শীতদেশে, উড়ে-উড়ে বিচরণ করতে পারবে, তা হলে এখানে যারা বাস করবে তাদের আর কোনো অসুবিধে হবে না!’

 বিশ্বকৰ্মা ভয় পেয়ে বলে উঠলেন—‘সর্বনাশ, পাহাড় যেখানে-সেখানে উড়ে বসতে আরম্ভ করলে যে-সব দেশে পাহাড়-পর্বত গিয়ে পড়বে, সে-সব দেশের দশা হবে কি? লোকগুলো-সুদ্ধ সারা-দেশ যে গুঁড়িয়ে ধুলো হয়ে যাবে!’

 বিশ্বামিত্র বলে উঠলেন—‘তা কেন! লোকেরা সব ধন-দৌলত খাবার-দাবার নিয়ে পাহাড়ে চড়ে বসবে, তা হলেই কোনো গোল নেই!’ বিশ্বকর্মা বললেন—‘সবাই পাহাড়ে চড়ে ঘুরে বেড়ালে আমার জমিতে হাল দেয় কে, রাজত্বই বা করে কে, ঘর-বাড়িই বা বেঁধে থাকে কে!’

 ‘তা আমি কি জানি’—বলে বিশ্বামিত্র হিমালয়ের ডানা দিতে যান, এমন সময় বিশ্বকর্মা তার হাত চেপে ধরে বললেন—‘আগে হিমালয়ের বাচ্ছা এই ছোট-খাটো মন্দর পর্বতটাকে ডানা দিয়ে দেখো, কি কাণ্ড হয়, পরে বড়টাকে নিয়ে পরীক্ষা কর।’

 বিশ্বামিত্র মন্দর পর্বতে ডানা দিয়ে যেমন ছেড়ে দেওয়া, সে অমনি উড়তে-উড়তে বাঙলাদেশের দক্ষিণ ধারে যে-সব দেশ গড়া হয়েছিল সেইখানে উড়ে বসল! যেমন বসা অমনি সারাদেশ রসাতলে তলিয়ে গেল; মাটি যেখানে ছিল সেখানে একটা উপসাগর হয়ে গেছে দেখা গেল।

৯২