বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুদ্ধের জীবন ও বাণী

কেমন করিয়া সম্ভব হইল, সেই রহস্যসম্বন্ধেও সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আপনাকে আপনি না জানিয়া মানব আপনার সত্তা রক্ষা করিবার নিমিত্ত নিরন্তর সংগ্রাম করিতেছে। অন্ধ যেমন আপনার গন্তব্যপথ দেখিতে পায় না, তথাপি দণ্ড হস্তে কোনরূপে যাতায়াত করে, মানবও তদ্রূপ অন্ধভাবে জীবনপথে চলিতে থাকে। সত্তা রক্ষা করিবার জন্য এই সংগ্রামে মানব যেমন অশেষ দুঃখ পাইয়া থাকে, তেমনি স্থূল সুখও লাভ করিয়া থাকে। জীবন এই সুখ দুঃখের সংমিশ্রণ। শশিকলায় যেমন হ্রাস ও বৃদ্ধি আছে, তরঙ্গে যেমন উত্থান ও পতন আছে, জীবনে তেমনি সুখ ও দুঃখ রহিয়াছে।

 দুঃখের অস্তিত্বসম্বন্ধে কাহারো সন্দেহ করিবার কোন হেতু নাই। সমগ্র বিশ্বজীবন হইতে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া মানব যখন আপনার ক্ষুদ্র সীমাবিশিষ্ট সত্তা রক্ষা করিবার জন্য সংগ্রাম করে, তখন তাহাকে দুঃখভোগ করিতেই হয়। সমগ্র জগতে সংযোগবিয়োগের যে অমোঘ বিধান বিদ্যমান আছে, দেব মানব কেহই সেই বিধান অতিক্রম করিতে পারিবেন না। যে শক্তিসমূহের সমবায়ে একটি স্বতন্ত্র সত্তার উদ্ভব হইল, একদিন-না-একদিন সেই শক্তিপুঞ্জ বিশ্লিষ্ট হইয়া পড়িবেই। যে মুহুর্ত্তে একটি সত্তার সৃষ্টি হইল, সেই মুহূর্ত্তেই তাহার উপর জরাব্যাধিমৃত্যুর ক্রিয়া আরম্ভ হইল। মানবের সত্তা সীমার দ্বারা আবদ্ধ; যেখানে সীমা, সেইখানেই অবিদ্যা; যেখানে অবিদ্যা, সেইখানেই দুঃখ।

 মানব যখন একটি স্বতন্ত্র সত্তা লাভ করে, তখন তাহার মন ও পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এই ছয়টি মুক্ত দ্বার দিয়া বাহিরের বিশ্ব প্রকৃতি তাহার উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে; ইহারই ফলে মানবের

৯৬