পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধজীবন

মনে বেদনার সঞ্চার হয় এবং ঐ বেদনা নানা তৃষ্ণার আকারে আপনাকে প্রকাশ করে। মানব তাহার এই তৃষ্ণার দাবী কিছুতেই সম্পূর্ণরূপে পূরণ করিতে পারে না;—মন প্রেয় বলিয়া যাহা চায় তাহা সকল সময়ে পায় না, এবং অপ্রিয় বলিয়া যাহা বর্জ্জন করিতে চায়, তাহাও সময়ে সময়ে তাহাকে গ্রহণ করিতে হয়।

 তৃষ্ণার রসদ যোগাইতে এই অসমর্থতাই মানবের যাবতীয় দুঃখের মূলীভূত কারণ। যে মানব আপনাকে আপনি সম্যগ্‌জ্ঞাত নহে, তাহার তৃষ্ণা লতার ন্যায় ক্রমশঃ বিস্তৃত হইয়া পড়ে। মেঘবর্ষণে তৃণরাজি যেমন দিন দিন বর্দ্ধিত হয়, তৃষ্ণাভিভূত ব্যক্তির দুঃখও তেমনি দিন দিন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া থাকে। জালবদ্ধ শশকের ন্যায় তৃষ্ণাপরিবৃত ব্যক্তি পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও পঞ্চ বিষয় এই দশপ্রকার শৃঙ্খলে সংযুক্ত থাকিয়া বারংবার দুঃখ পাইয়া থাকে।

 অবিদ্যাবশে মানব আপনাকে বিশ্ব হইতে স্বতন্ত্র বলিয়া মনে করিয়া থাকে, কিন্তু সে এই অনন্ত বিশ্বরূপ মহাসাগরের একটি ক্ষণস্থায়ী বুদ্‌বুদ্‌মাত্র। স্বভাবতঃই তাহার মনে হয়, যেন সে ভূত কালের, বর্ত্তমান কালের ও ভবিষ্যৎকালের চেতন অচেতন সকল পদার্থ হইতে স্বতন্ত্র। এই বোধের বশবর্ত্তী হইয়াই সে তাহার ক্ষুদ্র ব্যক্তিত্বের প্রীতিসাধনের জন্য নিয়ত চেষ্টা করিয়া থাকে; অথচ সংগ্রামের ফলে তুচ্ছ সুখোপকরণ লাভ করিয়া তাহার তৃষ্ণা শান্ত না হইয়া বৃদ্ধিপ্রাপ্তই হয়; এই প্রকারে সে বৃহত্তর দুঃখ এবং উগ্রতর নৈরাশ্যের সন্মুখীন হইতে থাকে।

 ক্ষিপ্রবেগে অশ্ব ছুটাইয়া সমতল ভূমির উপর দিয়া সারথি শকটারোহণে অগ্রসর হইতে হইতে প্রতিমুহূর্ত্তেই তাহার প্রচণ্ড

 
৯৭