বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুদ্ধের জীবন ও বাণী

 অভিধর্ম্ম এই গৃহকারের নাম দিয়াছেন কর্ম্ম। বাহিরের ক্রিয়াগুলি বা ব্যাপারগুলি কর্ম্ম নহে। আমি শক্রকে বধ করিলাম, এই হননব্যাপার কর্ম্ম নহে, ইহা সাধন করিয়া যে সংস্কারের উৎপত্তি হইল, তাহাই কর্ম্ম বা উক্ত সংস্কারের অন্তর্নিহিত গূঢ়শক্তি কর্ম্ম। রূপ বেদনা সংজ্ঞা সংস্কার ও বিজ্ঞান ইহাদের মধ্যে যে শক্তি অবস্থান করিয়া ইহাদিগকে বুনিয়া অপূর্ব্ব ব্যক্তিত্বের জাল রচনা করে, কর্ম্ম সেই শক্তি। বৌদ্ধেরা এই ব্যক্তিত্বের নিরপেক্ষ অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। সূর্য্যরশ্মি ও বৃষ্টির কণা যেমন মনোমোহন ইন্দ্রধনু রচনা করে, সেইরূপ রূপবেদনাদি স্কন্ধই আশ্চর্য্য ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি করিয়া থাকে; বস্তুতঃ ব্যক্তিত্বের একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নাই। দুই স্থানের অন্তর্বর্ত্তী বায়ুপ্রবাহ ঐ দুই স্থানের চাপের তারতম্য দূর হইবামাত্র যেমন বিশ্ববায়ুর সহিত মিলিয়া যায়, আমাদের ব্যক্তিত্বও বাসনার বিলোপ ঘটিবামাত্র তেমনি বিশ্বসত্তার সহিত মিলিত হইয়া যায়।

 ব্যক্তিত্বের বা অহংএর পরমার্থতঃ কোন অস্তিত্ব নাই। রূপাদি পঞ্চ স্কন্ধের হেতুই ব্যক্তি। ইহার অস্তিত্বের প্রকৃতি যেমনই হউক, এই ব্যক্তিই দুঃখ ভোগ করেন, সংসারে বিচরণ করেন এবং এই ব্যক্তিরই নির্ব্বাণ হইয়া থাকে; সুতরাং দুঃখই বল, সংসারই বল, আর নির্ব্বাণই বল, ব্যক্তি ইহাদের মূলে থাকিয়া এইগুলিকে নিয়মিত করেন; কিন্তু ব্যক্তি যে কর্ম্ম করেন, তিনি সেই কর্ম্মের হেতু নহেন, কর্ম্মই তাহার উপর প্রভুত্ব করিয়া থাকে। একটি সূক্ষ্ম সূত্র যেমন শত শত কুসুমের মধ্য দিয়া আপনাকে প্রবাহিত করিয়া বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র কুসুমগুলিকে একটি মালায় পরিণত করে, তেমনি

১০২