বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধকর্ম্ম

দুর্ণিরীক্ষ্য কর্ম্মশক্তি বিভিন্ন মুহূর্ত্তের, বিভিন্ন দিনের, বাল্য যৌবন প্রৌঢ় বার্দ্ধক্য প্রভৃতি বিভিন্ন অবস্থার এবং জন্মজন্মান্তরের একই জীবের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়া ইহাদিগকে একত্ব দান করিতেছে। এই বর্ত্তমান মুহুর্ত্তে আমি যাহা আছি, তাহা, পূর্ব্ব পূর্ব্ব মুহূর্ত্তে আমি যাহা ছিলাম, তাহারই পরিণামমাত্র। আমরা দুগ্ধ হইতে দধি, দধি হইতে নবনীত, নবনীত হইতে ঘৃত পাইয়া থাকি; কিন্তু তা’ বলিয়া এইরূপ বলা চলেনা যে, যাহা দুগ্ধ তাহাই দধি, তাহাই নবনীত, তাহাই ঘৃত; অথচ দুগ্ধকে আশ্রয় করিয়াই দধি নবনীত ও ঘৃতের উদ্ভব হইয়াছে। দধি দুগ্ধ নহে, আবার দুগ্ধ হইতে অন্য নহে। দধিত্বের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে দুগ্ধত্ব নিরুদ্ধ হয় কিন্তু দুগ্ধত্বের ধর্ম্মপ্রবাহ উৎপদ্যমান দধিত্বে বিদ্যমান থাকে। এইরূপ শিশুর যুবকের প্রৌঢ়ের বৃদ্ধের ব্যক্তিত্ব স্বতন্ত্র হইলেও, একই দেহকে আশ্রয় করিয়া ঐ সকল অবস্থা সংগৃহীত হইয়া থাকে। কর্ম্মের পরিণাম প্রতি মুহূর্ত্তে প্রতি দিনে আমাদের মধ্যে নব নব ব্যক্তিত্বের রচনা করিতেছে। বিদ্যুৎপ্রবাহ যেমন দোলককে একটা নিরন্তর গতি দান করে, কর্ম্মপ্রবাহ তেমনি মানবজীবন লইয়া নানা ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার অশেষ খেলা খেলিতে থাকে। কত যুগ-যুগান্ত কত জন্মজন্মান্তর এই খেলা চলিতে থাকে, তাহার ইয়ত্তা নাই। প্রশ্ন হইতে পারে, তবে কি এই খেলার শেষ নাই? বৌদ্ধেরা বলেন, হ্যাঁ, এই খেলা ফুরাইবে বটে, কিন্তু যাবৎ তোমার অবিদ্যা দূর না হয়, তাবৎ তোমাকে কর্ম্মের প্রভুশক্তির অধীনতা অনিচ্ছায়ও স্বীকার করিতে হইবে, কিন্তু যখনই তুমি নির্ম্মলবোধি লাভ করিবে, তখনই কর্ম্মের সত্যপ্রকৃতি, তাহার যাদুবিদ্যা তোমার প্রজ্ঞা-

১০৩