পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধকর্ম্ম

অনাগারীক হইলেন, অর্থাৎ যে গৃহকারক তাঁহাকে জন্মজন্মান্তর নানা সংসারে ঘুরাইয়া অশেষ দুঃখ দিয়াছিলেন, তিনি সেই গৃহকারকের গৃহভিত্তি ও সাজসরঞ্জাম চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া ফেলিলেন। বৌদ্ধ-সাধক জানেন, শারীরিক, মানসিক ও বাচনিক কোন দুষ্ট কর্ম্ম করিলে, তাহাকে অবশ্যম্ভাবিরূপে তাহার ফলভোগ করিতে হইবে। চক্র যেমন ভারবাহী গর্দ্দভের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, দুঃখও তেমনি দুষ্কৃতকারীর অনুসরণ করিয়া থাকে। বৌদ্ধ-কর্ম্ম নির্ম্মম, তাহার দয়া নাই, স্নেহ নাই। সুমার্জ্জিত দর্পণ যেমন নিখুঁত প্রতিবিম্ব প্রদান করে, কর্ম্মও তেমনি যথাযথ ফল প্রসব করিয়া থাকে।

 কেহ কেহ মনে করেন, বৌদ্ধধর্ম্ম ঈশ্বরের বা ব্রহ্মের আসনে কর্ম্মকে স্থাপন করিয়াছেন। কিন্তু ভাবিয়া দেখিলে মনে হয়, এই ধর্ম্ম মানবাত্মাকে সকলের উচ্চ আসনে স্থান দিয়াছেন। যেহেতু সাধন দ্বারা মানব কর্ম্মের উপর প্রাধান্য লাভ করিতে পারেন; একথা অসঙ্কোচে বলা যাইতে পারে যে, মানব আপনার অদৃষ্ট, আপনার পরিণাম আপনিই রচনা করিয়া থাকেন। মানব আপনিই আপনার শৃঙ্খল গড়িয়া থাকেন এবং আপনার শক্তিতেই শৃঙ্খল ভাঙ্গিয়া মুক্তি অর্জ্জন করেন। বৌদ্ধধর্ম্মে মানবের বন্ধনমুক্তির একাধিপত্য মানবকে দান করিয়া মানবাত্মাকেই চরম গৌরব প্রদান করিয়াছেন।


১০৭