ইহা স্পষ্টই মনে হয় যে, তিনি সাধনা দ্বারা শরীর ও মন দুইকেই বলিষ্ঠ ও নির্ম্মল করিতে বলিয়াছেন। দেহকে আমরা যেমন মনের বহিরাবরণ বলিতে পারি, তেমনি মনকেও দেহের সূক্ষ্ম সত্তা বলিলে ভুল হইবে না। বাহিরে জীবের যে সত্তা দেহরূপে প্রকাশ পায়, ভিতরে সেই অনুভূতিকেই মন বলিতে পারা যায়। ব্যক্তির সমগ্র সত্তা এই দুইয়ের সমষ্টি। এই জন্য এক দিকে দেহকে যেমন পবিত্র রাখিতে হইবে, অপর দিকে প্রবৃত্তির ধূলিজাল ধুইয়া-মুছিয়া মনটিকে দর্পণতুল্য স্বচ্ছ করিতে হইবে। মনকে পবিত্র রাখিতে হইলে প্রতিপদে কঠিন সংযমের প্রয়োজন বলিয়াই বুদ্ধদেব নৈতিক অনুশাসনগুলির উপর এতটা জোর দিয়াছেন। তিনি যাগযজ্ঞক্রিয়াকাণ্ডের অসারতা ঘোষণা করিয়া এই কথাটিই বারবার বলিয়াছেন যে, আত্মশক্তি দ্বারা ইন্দ্রিয়দমন কর এবং আপনাকে কল্যাণকর্ম্মে দান করিয়া চরম শ্রেয় লাভ কর।
জীব একটি নির্ম্মল উজ্জ্বল মন লইয়া পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, ইহাই সম্ভবপর বলিয়া মনে হয়। নানা কারণে পরিবেষ্টনের প্রভাব যখন মনের সামঞ্জস্য নষ্ট করিয়া দেয়, তখনই তাহার উপরে প্রবৃত্তির নানা জঞ্জাল স্তুপীভূত হইয় উঠে; মানুষের মনটা তখন নানা প্রবৃত্তির তাড়নায় প্রবল তরঙ্গের মধ্যস্থিত ক্ষুদ্র তরণীর মত ক্রমাগত আন্দোলিত হইতে থাকে। গীতায়ও উক্ত হইয়াছে—
ইন্দ্রিয়াণাং হি চরতাং যম্মনোঽনুবিধীয়তে।
তদস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুর্নাবমিবাম্ভসি॥
বায়ু যেমন প্রমত্ত কর্ণধারের নৌকাকে জলে নিক্ষিপ্ত করে, তেমনি মন যদি অবশীভূত ইন্দ্রিয়ের অনুগমন করে, তাহা হইলে ঐ