পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধসাধনা

 বৌদ্ধসাধকের ধ্যানের বিষয় চারিটি। প্রথম—নির্জ্জনে ধ্যান করিয়া চিত্ত হইতে সর্ব্বপ্রকার পাপলালসা-বিমোচন। দ্বিতীয়—পবিত্র আনন্দ ও সুখের ধ্যানের দ্বারা চিত্তসমাধান। তৃতীয়—আধ্যাত্মিক বিষয়ের ধ্যান দ্বারা চিত্তবিনোদন। চতুর্থ—চিত্তকে সুখ ও দুঃখের উর্দ্ধে উন্নত করিয়া পবিত্রতা ও শান্তির মধ্যে বিহার।

 বৌদ্ধসাধকের লক্ষ্য বুদ্ধত্বলাভ। তিনি জানেন, অজ্ঞানতারূপ কুহেলিকায় মন আবৃত বলিয়াই আমরা স্বার্থপর; চরম-লক্ষ্যসম্বন্ধে অজ্ঞ বলিয়াই আমরা প্রবৃত্তির দাস; সকলের সহিত মূল ঐক্যসম্বন্ধে অজ্ঞান বলিয়াই আমরা ক্রোধ হিংসা দ্বেষ প্রভৃতি প্রকাশ করিয়া থাকি।

 বৌদ্ধসাধনা জ্ঞানের দিকে এতটা ঝোঁক দিয়াছে বলিয়া কেহ কেহ ইহাকে নীরস একঘেঁয়ে জ্ঞানের সাধনা বলিয়া থাকেন। বোধিলাভ যে সাধনার চরম লক্ষ্য তাহাকে জ্ঞানের সাধনা বলা কিছুমাত্র অত্যুক্তি নহে। কিন্তু এই সঙ্গে ইহাও বলা কর্ত্তব্য যে, বৌদ্ধসাধনার উদ্ভব, প্রয়াণ ও পরিণতি প্রেমে। প্রেমের পরিব্যাপ্তিই বৌদ্ধসাধুর প্রতিদিনের সাধন, তাঁহার মনন ও ধ্যান হইতেই ইহা বোঝা যাইতে পারে।

 অঙ্গুত্তরনিকায়ে প্রথম নিপাতে দ্বিতীয়বর্গে বুদ্ধদেব বলিতেছেন—হে ভিক্ষুগণ, আমি অন্য এক ধর্ম্মও দেখিতেছি না যাহার প্রভাবে অনুৎপন্ন কামচ্ছন্দ অর্থাৎ কামাভিলাষ উৎপন্ন না হয় বা উৎপন্ন কামচ্ছন্দ প্রহীণ অর্থাৎ বিনষ্ট হয়। হে ভিক্ষুগণ, জ্ঞানপূর্ব্বক শরীরের অনিত্যতা চিন্তা করিলে অনুৎপন্ন কামচ্ছন্দ উৎপন্ন

১১৭