এই সময়ে সাধক আপনার ক্ষুদ্র সত্তা বিশ্বসত্তার সহিত মিলাইয় দিয়া আপনার সত্যমূর্ত্তি দেখিতে পান।
এই যে সাধনপ্রণালীর কথা বলা হইল, ইহার মধ্যে এক হিসাবে কোনো নূতনত্বই নাই। পূর্ব্ব-পূর্ব্ববর্ত্তী আচার্য্যগণ খণ্ডভাবে প্রকারান্তরে ইহা স্বীকার করিয়া গিয়াছেন। এই সাধনায় যেমন কঠোর তপশ্চর্য্যা নিস্ফল বলিয়া উক্ত হইল; সংযম-বন্ধনমুক্ত ভোগবিলাসও তেমনি নিন্দিত হইল। বৌদ্ধসাধন-প্রণালী প্রেমহীন শুষ্কজ্ঞান নহে; অথবা জ্ঞানহীন বিকৃত প্রেম বা ভাবোন্মাদ নহে। বৌদ্ধসাধনা যোগ ও ভোগের সামঞ্জস্য; জ্ঞান ও প্রেমের সমন্বয়। সংক্ষেপে বলিতে হইলে বলা যায়—যাহা কিছু অকল্যাণ তাহার বর্জ্জন, যাহা কিছু মঙ্গল তাহার গ্রহণ, এবং মনকে সর্ব্বপ্রকার বাধা হইতে মুক্ত করিয়া দিয়া সর্ব্বত্র ইহার পরিব্যাপ্তি; ইহাই বৌদ্ধসাধনা।
বৌদ্ধধর্ম্ম দার্শনিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই ভিত্তি সুদৃঢ় কিনা পণ্ডিতমণ্ডলী তাহার বিচার করিতে পারেন। কিন্তু এই ধর্ম্মের শীল ও মৈত্রী মানবহৃদয়ে চির-প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে। জ্ঞানরূপে এই ধর্ম্মের তত্ত্ব সাধকের হৃদয়ে যে ভাবে বিরাজ করিয়া থাকে, করুক; এই ধর্ম্মের যে অংশ সমগ্র জাতির এবং সমস্ত জীবের সেবায় ও কল্যাণ-সাধনে প্রেমের মঙ্গলমূর্ত্তি ধরিয়া বাহিরে অভিব্যক্ত হইয়া থাকে, তাহার মনোহারিত্ব অস্বীকার করিবার উপায় নাই। বৌদ্ধ সাধু জগতের মধ্যে সর্ব্বপ্রথমে আতপক্লিষ্টকে পাদপচ্ছায়া, তৃষিত পান্থকে পথের মধ্যস্থলে জলাশয় ও বিশ্রাম-ভবন, অসহায় রোগীকে সেবালয় এবং রোগার্ত্ত জীবকে