পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধ সাধকের নির্বাণ

এই লইয়াই ব্যস্ত—প্রতিবেশীকে, সর্ব্বমানবকে বিশ্বসংসারকে সে ভালবাসিবে কেমন করিয়া? এই অজ্ঞানতা কিংবা অবিদ্যা উচ্চ প্রাচীরের ন্যায় চারিদিক হইতে তাহার দৃষ্টি রোধ করিয়া রাখে। কয়েদীর ন্যায় এই কারাগারের মধ্যে সে বাস করে, কারাবাসের অসহ্য দুঃখ সে অনুভব করে, কত সময়ে দুঃসহ দুঃখে অধীর হয়, কিন্তু তথাপি ঘুরিয়া-ফিরিয়া ঐ কারাবেষ্টনের মধ্যেই তাহার দিন কাটিয়া যায়। এই আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তিই একমাত্র বৌদ্ধ সাধনার নহে, সর্ব্বদেশের সকলপ্রকার সাধনার প্রধান লক্ষ্য। যাঁহারা আপন আপন জীবনের সাধনাদ্বারা বিশ্ববাসীকে এই দুঃখ নিবৃত্তির উপায় দেখাইয়া দিয়াছেন তাঁহারাই সর্ব্বদেশে মহাপুরুষ বলিয়া পূজিত হইতেছেন। তাঁহারা মহাসত্ত্ব বা মহাপুরুষ, কেননা তাঁহারা ক্ষুদ্রতার, অবিদ্যার কিংবা অহংকারের প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া আপনাকে সর্ব্ব মানবের পরমাত্মীয় করিয়া দিয়াছেন। মহাসাধকদিগের বাণী বিভিন্ন হয় হউক, সাধনার প্রণালী বিচিত্র হয় হউক, কিন্তু তাঁহাদের সাধনার মূল এবং তাহার পরিণতি অভিন্ন। অত্যন্ত দুঃখই সকলকে সাধনায় প্রবৃত্ত করিয়াছে এবং সিদ্ধি লাভ করিয়া সকলেই শুদ্ধসত্ত্ব হইয়া দুঃখের হাত হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছেন। সিদ্ধি লাভ করিবার পরে মহাপুরুষ আর বদ্ধজীব নহেন, মুক্তজীব। তখন তাঁহার স্বার্থমূলক আমিত্বের বিলোপ ঘটে বলিয়া তিনি আত্মসুখ কামনায় কিছুই করেন না, যাহা কিছু করেন সমস্তই সর্ব্বহিত কামনায় সম্পাদিত হইয়া থাকে। যাহাতে সকলের কল্যাণ যাহাতে সকলের সুখ, প্রশান্তচিত্ত মহাপুরুষ তাহাই করিয়া থাকেন। অবিদ্যার হস্ত হইতে মুক্তি লাভ

১৩৫