পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৷৷৹

অসীম অথচ সীমার জগতে তাঁহার নৃত্যলীলা করিতে হইবে। তাই সকল দিঙ্মণ্ডলের সীমায় সীমায় তাঁহার নৃত্যলীলা কুণ্ঠিত হইয়া উঠিতেছে। এই দুরূহ ব্রতে গ্রন্থকার প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াছেন এবং যে পরিমাণ সাফল্য আশাও করি নাই তাহাও লাভ করিয়াছেন দেখিয়া বিস্মিত হইলাম। এই দুই বিরুদ্ধ ধারাকে মিলিত করিয়া দীর্ঘ সময় চলা অসম্ভব, এই পথখানি যে “ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া।” এইরূপ গ্রন্থ দীর্ঘ হইতেই পারে না, তাই এই দীর্ঘ গ্রন্থখানি খুব দীর্ঘ হয় নাই, তথাপি গ্রন্থখানি অপূর্ব্ব। অ-বৌদ্ধ সাধকের কাছে এইরূপ একখানি গ্রন্থের একান্ত প্রয়োজন ছিল; এই গ্রন্থে বুদ্ধের ঐতিহাসিক শুষ্ক মূর্ত্তিও নাই, আবার তিনি একেবারে দেবতা হইয়া অতি প্রাকৃত হইয় উঠেন নাই। এখানে তাঁহার সাধক বেশ। যে বেশে তিনি নিজে সাধনা করিয়াছেন সেই বেশেই সকল দেশের সকল যুগের ও সকল সম্প্রদায়ের সাধকের হৃদয়ে অসাধারণ সেবা-রস ও অপূর্ব্ব সাধন-রস সঞ্চার করিতেছেন। তাই এই গ্রন্থে তিনি অতি প্রাকৃত নহেন। এই হরিহরের মিলনে যজ্ঞটি বড় মধুর হইয়াছে।

 গ্রন্থকার গ্রন্থের সমস্ত বস্তুই বৌদ্ধশাস্ত্র হইতে বা ভক্তদের লেখা হইতে গ্রহণ করিয়াছেন। নিজ-কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। শাস্ত্রে অবশ্য বুদ্ধবাণী ও বুদ্ধকাহিনী আছে কিন্তু ঐতিহাসিক বুদ্ধের ন্যায় শাস্ত্রের বুদ্ধবাণীও শুষ্ক। মহাপুরুষদের বহু বাক্য শাস্ত্র ঠিক বুঝিতে পারে না—তাহা তাঁহাদের সাধকেরাই বোঝেন, কারণ তাঁহারা তো জ্ঞান বা দর্শন বলিতে অসেন নাই যে শাস্ত্রে বা দর্শনে তাহাদের সব কথা ধরা পড়িবে। তাঁহাদের সাধনার গভীর বাণী বহু সময় শাস্ত্রে ধরা পড়েই না এমন কি অনেক সময়