বহুকাল ভুগিতে হয়। স্বর্গে নিত্য সুখ নিত্য শান্তি থাকিতে পারে না।
যে সাধনা কামনার অগ্নিশিখা নির্ব্বাণ করিয়া দেয় না, যাহা সাধককে সুখ দুঃখের উর্দ্ধে অবস্থিত নিত্য শান্তির লোকে উত্তীর্ণ করে না, তেমন সাধনা গ্রহণ করিলে কি লাভ হইতে পারে?
জীবের অনন্ত দুঃখ সিদ্ধার্থকে গৃহত্যাগী করিয়াছে—কামনাই এই দুঃখের মূলে রহিয়াছে। যে স্বর্গে বিলাসবাসনা, কাম্যবস্তু ও ইন্দ্রিয়সুখের প্রাচুর্য্য রহিয়াছে, সেই স্বর্গ তিনি কেমন করিয়া স্বীকার করিবেন? তিনি মনে মনে স্থির করিলেন, শাস্ত্রবর্ণিত স্বর্গ মানবমনের কল্পনামাত্র। তিনি যে নিত্য অমৃতের সন্ধানে বাহির হইয়াছেন কল্পিত স্বৰ্গলোক তাহা নহে।
সিদ্ধার্থ মগধের রাজধানী রাজগৃহের অভিমুখে চলিলেন। এইখানে প্রতাপশালী নরপতি বিম্বিসার রাজত্ব করিতেছিলেন। বিন্ধ্যগিরির পাঁচটি শাখা এই নগরটিকে পরিবেষ্টন করিয়া ইহাকে এক অপূর্ব্ব স্বাভাবিক শ্রী দান করিয়াছিল। এখানকার শৈলমালার অভ্যন্তরে বহুসংখ্যক গুহা ছিল। রাজধানীর সমীপবর্ত্তী এই সকল নিভৃত ও রমণীয় গিরিগহ্বর অসংখ্য সাধুর সাধনভূমি হইয়া উঠিয়াছিল। মহামতি সিদ্ধার্থ এখানকার একটি গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করিলেন।
সমগ্র মানবজাতির কল্যাণকামনার সুমহান্ ভাব সিদ্ধার্থের চিত্ত অধিকার করিয়াছিল। কি উপায়ে মানবের দুঃখ দূর করবেন, কি উপায়ে মুক্তিলোক আবিষ্কার করিবেন, নির্জ্জনে তিনি তাহাই ভাবিতে লাগিলেন। এইখানে সিদ্ধার্থ একক ও অসহায় হইলেন।