পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br) e বৃহৎ বঙ্গ রাজপুত-শিল্প বাঙ্গলাদেশে প্রবেশ করিয়াছিল। এই শিল্পের নমুনা বাঙ্গলায় যাহা পাই, তাহা একের উপব অন্যের প্রভাব বিস্তার করার প্রমাণ ছাড়া সৌন্দর্ঘ্যের আদর্শ হিসাবে খুব উচ্চ মূল্যের যোগ্য বলিয়া মনে হয় না। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জয়পুরের শিল্প বাঙ্গলা চিত্রশালার উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তাব করিয়াছিল। জয়পুরী কৃষ্ণ অত্যন্ত মহিমা-সহকারে ঐশ্বৰ্য্য দেখাইয়া বঁাশীহাতে স্থির হইয়া দাড়াইযা থাকেন-ৰ্তাহার সহিত বঙ্গের সুচিরসম্পদমাধুৰ্য্যের সম্পর্ক অল্প। রংএব খেলায় জয়পুর। চিত্রকর সিদ্ধহস্ত—তাহাদের ছবিগুলি কমনীয়তা মাখানো, লাবণ্যপূর্ণ বর্ণসংযোগে বেশ চিত্তাকর্ষক। কিন্তু খাটী বাঙ্গল চিত্রের লীলাচঞ্চল প্ৰাণের খেলা তাহাতে অল্প । কাঙ্গড়া কলমেব চিত্র এখানে উল্লেখযোগ্য । আমবা উল্লেখ করিয়াছি পাঞ্জাবের উত্তর-পূৰ্ব্বসীমায় হিমালয়েব উপত্যকা প্রদেশস্থ কতকগুলি রাজ্যেৰ অধীশ্বব আপনাদিগকে সেন-রাজবংশধব বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। কাশ্মীর, পুঞ্চ, সুকেত, মণ্ডী এবং জুঙ্গার রাজবংশের প্রাচীন তালিকায় দৃষ্ট হয় যে গৌড়ের লক্ষ্মণসেনের বংশধর সুরসেন ১২৫৯ বিক্রম সংবৎসরে মুসলমানকর্তৃক গৌড়দেশ হইতে তাড়িত হইয়া প্ৰয়াগে গিয়াছিলেন। পূর্বোক্ত দেশগুলির অধীশ্বরেরা সুরসেনের পুত্র রূপসেনের ংশধর । * যখন রাজন্যবর্গের বংশতালিকায় একথা উল্লিখিত আছে, তখন আমাদের তাহা অবিশ্বাস করিবাব কোন কারণ নাই। পাঞ্জাব গেজেটিয়ার উক্ত রাজগণের যে বংশতালিকা দিয়াছেন, তাহাতেও এই কথা পাওয়া যায় এবং পাঞ্জাবের প্রসিদ্ধ কৰ্ম্মবীর স্বৰ্গীয় রামভূজ দত্ত চৌধুরী মহাশয়ের স্ত্রী বঙ্গের বিদুষী কন্যা সরলা দেবী তথা হইতে এই বংশাবলী সঠিক জানিয়া আসিয়াছেন। ১২৫৯ বিঃ আব্দ, ইংরেজী ১২০২ খৃঃ আব্দ, এই সময়েই লক্ষ্মণসেন মুসলমানের আক্রমণে বিব্রত হইয়া পড়েন, তিনি তখন অতি বুদ্ধ হইয়াছিলেন এবং গৌড়ের শাসনভার তৎপুত্ৰ কেশবসেনের উপর ন্যস্ত ছিল। কেশবসেনের সঙ্গে মুসলমানদের যে যুদ্ধবিগ্ৰহ হইয়াছিল তাহার বিস্তারিত বিবরণ কোনস্থলে পাওয়া যায় না । কিন্তু একথা নিশ্চিত যে পিতা নবদ্বীপ হইতে চলিয়া গেলে কেশব শত্রুদিগকে সহজে গৌড়ে প্ৰবেশ করিতে দেন নাই! সেই হৃতরাজ্য রাজগণের ইতিহাস কোন দেশীয় লোক লিখিয়া যান নাই ।। ১২০২ খৃঃ অব্দে সুরসেন মুসলমানকর্তৃক গৌড় হইতে তাড়িত হইয়াছিলেন, ইনি কেশবসেনের পুত্র হওয়াই সম্ভব। যদি তাহাও না হয়, তবে তিনি যে লক্ষ্মণসেনের পৌত্র ছিলেন-তাহা সহজেই অনুমিত হয়। লক্ষ্মণসেন উত্তর-ভারতে “হিন্দুধৰ্ম্মের খলিফা” বলিয়া স্বীকৃত ছিলেন। মুসলমানকর্তৃক উত্তর-ভারত-বিজয়কালে যে বঙ্গদেশের রাজা একেবারে নিশ্চেষ্ট ছিলেন এমন মনে হয় না। তাহা হইলে এতগুলি পার্বত্য প্রদেশে লক্ষ্মণসেনের বংশধরেরা কখনই রাজত্বপদ পাইতেন না। খুব সম্ভব সুরসেন হিন্দু-মুসলিম সমরে উত্তর-ভারতে কোন না কোন পদে অধিষ্ঠিত থাকিয়া কিংবা নিপীড়িত হিন্দুদের পক্ষে যুদ্ধ করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন-নতুবা কাজড়া কলম।

  • রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়-কৃত বাজালার ইতিহাস, ২য় খণ্ড (২০-২১ পৃঃ) দ্রষ্টব্য।