পাঠান রাজত্বসম্বন্ধে নানা কথা やシQS) পরগনার সুবিখ্যাত বজ্ৰযোগিনী গ্রামের এক বিধবা ব্ৰাহ্মণ্যকন্যা ; সমসুদিন সুবর্ণগ্রাম ষাওয়ার পথে নদীর ঘাটে এই অসামান্য রূপসী ষোড়শীকে দর্শন করিয়া বলপূর্বক তাহাকে স্বীয় অন্দরমহলে লইয়া আসেন ; সামসুদিনের নিকট তথাকবি প্ৰধান প্ৰধান ব্ৰাহ্মণ ও অপরাপর শ্রেণীর বিশুদ্ধ হিন্দুবা উপস্থিত হইয়া এই কাৰ্য্যের প্রতিবাদ কবেন। বাদসহ বলিলেন, “আচ্ছা বেশ! ফুলমতীকে আমি ছাড়িয়া দিতেছি, ইহার সমান ঘরের কোন সৎব্ৰাহ্মণ ইহাকে বিবাহ করুন,--নতুবা গণিকাবৃত্তি করিবার জন্য এবং সমাজচ্যুত হইয়া নিরাশ্রয়া হইয়া থাকিবার জন্য আমি এমন সুন্দরী মহিলাকে কখনই প্ৰত্যাৰ্পণ করিব না।” বাদাসাহের কথায় কেহ অবশ্য রাজী হইলেন না, তখন তিনি স্বয়ং তঁহাকে নিকা করিলেন। এই রমণী যেরূপ অপূৰ্ব্ব সুন্দরী ছিলেন, তেমনই বুদ্ধিমতী ছিলেন, তৎসমাযের আফগান-দরবারে আসিয়া তিনি বিলাসকলা ও কূটনীতি শিখিয়াছিলেন । সমসুদিনের উপর ফুলমতী বিবির প্রভূত ক্ষমতা ছিল, এমন কি তঁাহার মৃত্যুর পর কংসারাম, জুন খ্যা প্ৰভৃতি রাজ-দরবারের প্রধান ব্যক্তিগণকে তিনি নিকা করিবেন। সেই লোভ দেখাইয়া ক্রীড়াপুত্তলীর মত ব্যবহার করিয়াছিলেন । মুসলমানগণ হিন্দুপ্ৰভাবের কোন উল্লেখই করেন নাই-কিন্তু ফুলমতী বেগম যে কতটা শক্তির সহিত বাদাসাহের দরবারে শাসনকাৰ্য্য নিয়ন্ত্রিত করিয়াছেন, তাহা বারেন্দ্র-ব্ৰাহ্মণ-কুলজী গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে লিখিত আছে। সান্ন্যাল মহাশয় লিখিয়াছেন—-গায়েসুদিনের মৃত্যুর পর ফুলমতীর পুত্ৰ মই জুদিন গৌড়ের বাদসাহ হন। মধু খাঁ ও ফুলমতী— নিতান্ত অলস, বিলাসী ও অকৰ্ম্মণ্য মই জুদ্দিনকে সিংহাসনে স্থাপিত করিয়া প্ৰকৃত শাসনকাৰ্য্য তাঙ্কারাই সম্পাদনা করিতেন। কিন্তু মই জুদ্দিন বাদাসাহের অস্তিত্ব অন্য কোন সুত্ৰে এখনও প্রমাণিত হয় নাই। তঁহার সময়ে রাজসাচীর একটাকিয়া ও সাতড়ার রাজারা বাদাসাহের অগ্নি'হে খুব প্ৰবল হইয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। তাহারা যে ঐ সময়ে প্রভূত শক্তিশালী হইয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। ঘটকীকারিকা ও প্রবাদবাক্যেবা ভিত্তি অনেক সময়ই সত্যমূলক, কিন্তু সময়ে সময়ে উদেব পিণ্ডি বুদের ঘাড়ে পড়িয়া ইতিহাসকে বিকৃত করিয়া ফেলিয়াছে। এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে নানারূপ ভ্ৰম, প্ৰমাদ ঘটিয়া থাকিলেও ফুলমতী বিবির অস্তিত্ব ও বাদসহ-দরবারে তাহার প্রভাব কখনই অবিশ্বাস্ত বলিয়া মনে হয় না, দেশব্যাপী জনবর ও প্রবাদের ভিত্তিতে নিশ্চয়ই সত্য নিহিত আছে । ফুলমতীর প্রভাবেই হউক অথবা অন্য যে কোন কাবণেই হউক, এই বাদ সাহিদের সময়ে হিন্দুরা যে রাজসভায় অতি প্রধান ছিলেন-তাহাতে কোন সন্দেহই নাই। ইহার পরবর্তী এক অধ্যায়ে আমরা দেখাইব, মুসলমান রাজা এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ “সিন্ধুকী” লাগাইয়া ক্ৰমাগত সুন্দরী হিন্দুললনাগণকে অপহরণ করিয়াছেন—তাহাদিগকে নিকা করিয়া বহু সন্তান উৎপন্ন করিয়াছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানগণ এবং শ্ৰীহট্টের বানিয়াচঙ্গের দেওয়ানেরা এইরূপে যে কত হিন্দু রমণীকে বলপূর্বক বিবাহ করিয়াছেন, তাহার অবধি নাই। পল্লীগীতিকাগুলিতে সেই সকল করুণ কাহিনী বিবৃত আছে। কোন ফুলমতী বেগম।
পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫
অবয়ব