পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b8 বৃহৎ বঙ্গ চীন প্ৰভৃতি দেশে যাইয়া উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছেন । তাহারা সেই সকল অঞ্চলে যে কীৰ্ত্তি প্ৰতিষ্ঠিত করিয়াছেন, তাহা চিরস্মরণীয় গরিমায় উজ্জ্বল। প্ৰাম্বাণম, শ্যামদেশ ও কাম্বোডিয়া প্ৰভৃতি স্থানে বঙ্গ ও কলিঙ্গ দেশীয় বহু কীৰ্ত্তি বিদ্যমান। সুমিত্রা ও বালীদ্বীপে খৃষ্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর যে সকল প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গিয়াছে তাহাদের ছাঁচ অনেকটা পাল রাজাদের সময়ের বঙ্গাক্ষরের মত। বালী ও ব্যবদ্বীপের শুধু লিপি নহে, অনেক প্রস্তর ও ধাতু-মূৰ্ত্তিতে বাঙ্গালী-ভাস্করের হস্ত-চিহ্ন অতি স্পষ্ট । অধুনা চট্টগ্রামের দেযাং পাহাডের নিকটে ভূনিম্ন হইতে অষ্টম ও নবম শতাব্দীর বহু ধাতব মূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। এই স্থানে আমরা সেই মূৰ্ত্তিগুলির একখানির এবং বালীজাবা দ্বীপের কয়েকখানি বুদ্ধ বিগ্রন্সের ছবি দিলাম। আমার নিকট আরও দুইখানি ছিল, একখানি আমি মজিলপুরের কালিদাস দত্ত মহাশয়কে দিয়াছি। পাঠক দেখিবেন, বাঙ্গালী কৃত বিগ্রহ ও ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মূৰ্ত্তিগুলি শুধু যে এক আদর্শে নিৰ্ম্মিত তাহা নহে, তাহদের সাদৃশ্য এত অধিক যে, মনে হয় তাহারা একই ভাস্করের দ্বারা নিৰ্ম্মিত । পাল রাজাদের সঙ্গে যে ভারতীয় ঐ দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল তাহার অনেক প্ৰমাণ পাওয়া গিয়াছে । কিন্তু তথাপি সিংহল-বিজয়কেই আমরা বঙ্গদেশের সর্বশ্ৰেষ্ঠ কীৰ্ত্তি বলিয়া মনে করি । এক কালে ‘বাহু’ শব্দযুক্ত নাম প্ৰাচীনকালে বঙ্গদেশের বৈশিষ্ট্য ছিল । চন্দ্রগুপ্তের গুরু ভদ্র বাহুর বাড়ী পৌণ্ডবদ্ধনে ( বঙ্গে ) { ধৰ্ম্মপালের সমসাময়িক আসামের রাজা ছিলেন বীরবাহু। এরূপ আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। ‘কৃদ্ধিবাসী” রামায়ণে বীরবাহুর উল্লেখ আছে, সংস্কৃত রামায়ণে নাই- উহা বাঙ্গালী কল্পনার সৃষ্টি বলিয়াই মনে হয় । সিংহবাহুর জন্মকথা একটা গল্প মাত্র । গল্পটা রোম-নগর-স্থাপয়িতা রমলাসের গল্পের মত। সমুদ্রতীরে রমুলাস ও তাহার প্রাতা রিমাদকে এক ব্যাস্ত্রী স্বীয় স্তন্য পান করাইয়া পালন করিয়াছিল। সিংহবাহুর সম্বন্ধে উপকথাটার দৌড় আরও অনেক বেশী। ইহাতে দৃষ্ট হয় সিংহবাহুকে একটা সিংহ জন্মদান করিয়াছিল। বঙ্গদেশে পশুরাজের সঙ্গে সেদিনও মণিপুরের রাজমূৰ্ত্ত অঙ্কিত পাওযা যাইত। সিংহ এদেশে চিরকালই পরাক্রমের লাঞ্ছন। গৌড়েশ্বর রামপালের দ্বিতীয় পুত্র কুমারপালের সেনাপতি বৈদ্যদেব একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে পরাজিত রাজাদের মুকুটের সোনা দিয়া এক বৃহৎ সিংহ গড়াইয়াছিলেন এবং তাহ তাত, প্রাসাদের তোরণের উন্ধে স্থাপন করাইয়াছিলেন। ত্রিপুরা প্ৰভৃতি পূর্ববঙ্গের কোন কোন প্ৰাচীন রাজ-সিংহাসন ষোড়শ সিংহ-দ্বারা ধৃত । সিংহলাধিপ একটি মোমনিৰ্ম্মিত সিংহ মগধেশ্বরকে পাঠাইয়াছিলেন, তাহা দেখিতে ঠিক জীবন্ত সিংহের মত হইযাছিল; ঐ সিংহ পিঞ্জরাবন্ধ ছিল। পিঞ্জরের দ্বার না খুলিয়া কেহ পশুরাজকে বাহির করিতে পারেন। কিনা পরীক্ষা করিবার জন্য সিংহবাহুর বংশধর সিংহটা মগধে মহানন্দের সভায় পাঠাই দিয়াছিলেন। একটা উত্তপ্ত লৌহশিলাকা পিঞ্জরের মধ্যে প্রবেশ করাইলে সিংহ গলি বাহির হইয়া আসিল । মগধবাসীর বুদ্ধির জয়জয়কার পড়িল । সিংহ-সম্বন্ধে এইরূপ না