পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশোক-নীতি Swb দিতে বলিলেন । কঙ্কর বলিলেন, “আমি আপনার দ্বারা পরাস্ত হইয়াছি-আপনি আমার বিজয়ী, অন্য কাহারও মুখোচ্চারিত বাণী আমি শুনিব না, আপনারই আমাকে আদেশ করিতে হইবে।” মির্চা লক্ষ্যস্থান স্থির করিয়া কঙ্করকে আদেশপুৰ্ব্বক যাই সরিয়া পড়িবেন, তৎপূর্বেই কঙ্কর-হস্তনিক্ষিপ্ত বাণ ৰ্তাহার বক্ষ ভেদ করিল। এই ভাবে ১৪৫১ খৃঃ অব্দে মির্চা মৃত্যুমুখে পতিত হন ( মোগল ইতিহাস, এম'এ এফ এ কারটনপ্রণীত, প্রথম সংস্করণ, লণ্ডন ১৭০৯, বঙ্গবাসী সংস্করণ ২৯-৩১, পৃ: ) । এই পুস্তকের ১১৯ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে, হিন্দুরা আক্রান্ত হইলে যুদ্ধ করিয়া থাকে, কিন্তু স্বেচ্ছায় অপর কাহারও রাজ্য আক্রমণ করিতে যায় না। এই ক্ষত্ৰিনীতি যে কিরূপ দৃঢ়ভাবে রাজগণ পালন করিতেন, তাহার অনেক দৃষ্টান্ত মহাভারতেই পাওয়া যায়। মহারাজ জরাসন্ধের বধ-সাধনাৰ্থে শ্ৰীকৃষ্ণ ও ভীমাৰ্জ্জুন ছদ্মবেশে গিরিব্রজপুরের রাজসভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। জরাসন্ধ গুপ্তচরের মুখে জানিয়াছিলেন যে হঁহারা গুপ্তার দিয়া তাহার চৈত্য ও ভেরী ভগ্ন করিয়া প্ৰবেশ করিয়াছেন। যে জরাসন্ধের পরাক্রম এরূপ ছিল যে স্বয়ং শ্ৰীকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন যে, তাহার সৈন্সের সঙ্গে যদি আমাদের যদুকুল অবিশ্রান্ত তিন শত বৎসর যুদ্ধ করে, তথাপি তাহার কিছু মাত্ৰ ক্ষয় করিতে পরিবে না,- ভারতের তৎকালীন সেই অদ্বিতীয় সম্রাট তাহার শক্ৰদের পরিচয় পাইয়াও ক্ষত্ৰিনীতি লঙ্ঘন করিলেন না; তিনি এই তিন অতিথি যুদ্ধকামী হইলে তন্মধ্যে ভীমকেই বিশেষ বলবান মনে করিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে ইচ্ছা প্ৰকাশ করিলেন, যেহেতু মল্লযুদ্ধ করিতে হইবে, তাহাতে শারীরিক বলেরই অধিক দরকার। কৃষ্ণকে তিনি মনে মনে ‘দাস’ বলিয়া ঘূণা করিতেন, এজন্য উপেক্ষা করিয়াছিলেন। এদিকে তিনি ধৰ্ম্মকাৰ্য্যে ব্ৰতী হইয়া উপবাসী হইয়াছিলেন, সেই উপবাস ক্লান্ত দেহেই রণক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন, তথায় তাহার আত্মীয় সুহৃৎ ও বৃহৎ চমু উপস্থিত ছিল, কিন্তু ক্ষত্ৰিনীতি পালন করিয়া সংযতভাবে তিনি যুদ্ধ করিয়াছিলেন। প্ৰলয়পয়োধি যেরূপ বেলা অতিক্রম করেন না, ক্ষত্ৰধৰ্ম্মনীতি সেইরূপ সীমা উল্লঙ্ঘন করেন নাই, আমরা এই কথা ৪২-৪৩ পৃষ্ঠায় একবার লিখিয়াছি। এই ক্ষত্র নীতি পালন করিয়া যুধিষ্ঠির দ্যুতক্ৰীড়ায় সৰ্ব্বস্বাস্ত হইলেন। যেহেতু দ্যুত-কাৰ্য্য মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র অনুমোদন করিয়াছিলেন, যুধিষ্ঠির তাহার আদেশ অমান্য করিতে পারিলেন না। श्शूि ब्राहेन्रौख्रि ऐझॉक्ष হইলেও তাহা দোষযুক্ত। যাহারা যমের মত ভীষণ, ইন্দ্র ও প্রভঞ্জনের মত দুৰ্ভাৰ্য-সেই ভীমাৰ্জ্জুন মেষশাবকের মত যুধিষ্ঠিরের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বনবাসী হইলেন, রাজনীতি ও রাজ-পরিবারে পালিত চিরাগত নীতির সংস্কার তাহারা উপেক্ষা করিতে পারেন নাই । হিন্দু রাজধানীতে উচ্চাঙ্গের ধৰ্ম্মনীতি আছে, কিন্তু তথাপি রাজনীতি কোনকালেই একেৰারে শুত্র চক্সকিরণবৎ হইতে পারে না। যেখানে সৰ্ব্বদা যুদ্ধ-বিগ্ৰহাদি করিতে । হইবে, শক্রিয় পরাজয় ইচ্ছা করিতে হইবে ও প্ৰজাদিগকে দমন করিয়া রাখিতে হইবে, সেখানে ষোগি-শুযিয় ধৰ্ম্ম চলে না।