বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ শুচিত। তাহারা রক্ষা করেন,-আমাদের ঐতিহাসিক বিষয়গুলির অধিকাংশ ধৰ্ম্ম-বিশ্বাসের সহিত জড়িত, সেই বিশ্বাসে হানা দিতে র্তাহাদিগের একটুও বাধে না,-“এই জন্য “আমাদের ইতিহাসের আলোচনা-কালে তঁাহারা অতিরিক্ত মাত্রায় বৈজ্ঞানিক হইয়া বসেন। হুইলার সাহেব সুখন লিখিলেন, কৌশল্যা নিশ্চয়ই দশরথকে বিষ খাওয়াইয়া মারিয়াছিলেন, তখন তৎকৃত ইতিহাসখানি বাঙ্গলার স্কুলে স্কুলে পাঠ্য করিতে কাহারও আপত্তি হইল না। — ইহাই বিজ্ঞান-সঙ্গত আলোচনা। আমাদের মুক জনসাধারণের একটা প্রখর অনুভূতি আছে-এই ভাবেল গবেষণা তাঁহাদের মৰ্ম্মান্তিক হয়; কিন্ত তুলসীতলা হইতে হাতের নোয়া পৰ্যন্ত হিন্দুজাতি যে চক্ষে দেখিয়া থাকেন, গবেষণার সময়ে হিন্দু লেখকের তাহা একটু মনে রাখিলে ভাল হয়-তােহা না হইলে জনসাধারণেব সঙ্গে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের যোগ-সুত্র ছিন্ন হুইবে । আমাদের জনসাধারণ একান্ত অবজ্ঞার যোগ্য নহে, তাহদের গোড়ামি সত্ত্বেও তাহারা বঙ্গের নিজস্ব ভাব, ধৰ্ম্ম ও শিল্প কতটা বজায় রাখিয়াছে, তাহা এই পুস্তকের পাঠক অনেক স্থলেই দেখিতে পাইবেন। ইহাদের সম্বন্ধে প্ৰসিদ্ধ লেখক পাদ্রী লিফ্রয় তাহার ভারতীয় অগাধ অভিজ্ঞতার বলে জানাইয়াছেন, “হিন্দুচাষা অত্যাশ্চয্য ক্ষমতাব সহিত সুন্মাতিসুন্ম দার্শনিক ও নীতিঘটিত আলোচনা কবিতে পারে । এই চাধারা একেবারে নিরক্ষর ও দরিদ্র।” (“ A very competent and independent witness Dr. Jefroy has testified from his long personal experience to the extraordinary aptitude with which the poorest and the most illiterate Hindu peasant will engage in discussion in the deepest philosophical and etbical questions.” ater a(kr frs:(st, “The indian painters though illiterate in the western sense are the most cultured of their class in the world.' (Introduction, xix, Ideals of the Indian Art, E. B. Havell. ex{Cés পটুয়ারা °5द्धJ-ड भूश, কিন্তু জগতের চিত্র কবদের মধ্যে তাহদের শিক্ষা-দীক্ষা সকলের উপরে। এ সম্বন্ধে আমার এই বক্তব্য ষে বাঙ্গলার লেখকবর্গ এদেশের ইতিহাস লিখিতে গিয়া একটু শ্ৰদ্ধার সহিত লিখিলে ভাল হয়, এই পুস্তকের ১৩৭-৩৮ পৃষ্ঠায় সাহেবদের রামায়ণ ও মহাভারতাদি সম্বন্ধে যে মতামত উল্লিখিত হইয়াছে, তাহার মধ্যে আসার ও অতিরিক্ত মাত্রায় বৈজ্ঞানিক মতগুলির তাহারা যেন প্রশ্ৰয় না দেন। মুসলমানদের জাতীয়ত, অনেক বেশী, তাহদের বিশ্বাসসম্বন্ধে কেহ কিছু লিখিতে সাহসী হন না। ইংরেজ রাজার জাতি-ৰ্তাহাদের ইতিহাস লইয়া কেহ যথেচ্ছাচার কারতে পারে না। একমাত্র হিন্দু সমাজই এই সকল বিষয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় গবেষণাশীল লেখকদের যথেচ্ছাচারের প্রশ্ৰয় দিতেছেন। আমার এই পুস্তক ভাবী ঐতিহাসিকগণের পক্ষে একখানি পাদপীঠরূপে গণ্য হইল থত হইব। তঁহায়া ইহাৰ উপর দাড়াইয়া বঙ্গ-জননীর যে মহিমান্বিত প্ৰতিমা গাড়িবেন, সেই গুম্ভ-স্বপ্ন আমার সমস্ত শ্রমকে সার্থক করিয়াছে, এই পরিকল্পনা আমার লেখনীকে বলাখ ।