পাতা:বেদান্তগ্রন্থ - রামমোহন রায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@छुब| (ve) ইন্দ্ৰিয়াদির উৎপত্তি এখানে আরো একটা বিষয়ের মীমাংসাৱ প্ৰয়োজন আছে। কঠোপনিষদ বলিয়াছেন “ইন্দ্ৰিয়েভ্য: পরা হৰ্থাঃ”। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ এই সকলই অর্থ বা জ্ঞানের বিষয়বস্তু। ইন্দ্ৰিয়সকল অপেক্ষা শব্দাদি বিষয় সূক্ষ্মতর, ব্যাপকতর, এবং ইন্দ্ৰিয়সকলের কারণ স্বরূপ ; এই তিন অর্থে ইহার পর। অর্থাৎ ইন্দ্ৰিয়সকল শব্দাদি বিষয় হইতে উৎপন্ন। এই উক্তির তাৎপর্য কি ? পূর্বে বলা হইয়াছে, অব্যক্ত বা মায়া হইতে পঞ্চ সূক্ষ্মমহাভূত বা পঞ্চতন্মাত্র অর্থাৎ শব্দাদি পঞ্চবিষয় উৎপন্ন হইয়াছে। এই সকল সূক্ষ্ম ভূত বা তন্মাত্র পরস্পর মিশ্রিত হইতে পারে না, সুতরাং ব্যবহারযোগ্য হয় না ; পরে যখন ইহারা স্কুল মহাভূতে রূপান্তরিত হয়, তখন ইহাদের শব্দাদি গুণ ও স্কুলত্ব প্ৰাপ্তি হয় ; তখন আমরা শব্দ শুনি, স্পর্শ বোধ করি, রূপ দেখি, রস আস্বাদন করি, গন্ধ আভ্রাণ করি। কি প্রকারে তাহা সম্ভব হয় ? শব্দ শোনা একটা ক্রিয়া ; প্ৰত্যেক ক্রিয়ার একটী কর্তা থাকে, কর্মও থাকে, এবং ক্রিয়া সাধনের জন্য করণেরও প্রয়োজন হয়। গাছের ডাল কাটিতে গেলে কুড়ালই কর্তনক্রিয়ার করণ। শব্দের শ্রবণ ক্রিয়ার কারণ কি ? উত্তরে বলিতে হয়, নিশ্চয়ই কারণ উৎপন্ন হয় ; সেই কারণের নাম কৰ্ণ; এইরূপে স্পৰ্শবোধের কারণ ত্বক, দর্শনক্রিয়ার করণ চক্ষু ; আস্বাদনের কারণ জিহবা, আম্রাণের কারণ নাসিকা। এইভাবে পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্ৰিয়ের উৎপত্তি নিশ্চয়ই হয়, নতুবা ক্রিয়া সম্ভব হইত না। ইন্দ্ৰিয়সকল অতি সূক্ষ্ম, সুতরাং দৃশ্য নহে, কিন্তু অনুমানের দ্বারা তাহাদের অস্তিত্ব বোঝা যায়। এই অনুমানের নাম কাৰ্যলিঙ্গক অনুমান ( পঞ্চদশী, ভূতবিবেক)। দূর পর্বত হইতে উৎপন্ন নদী বহিয়া যায় ; দেশে বৃষ্টি না থাকিলেও যদি দেখা যায়, নদীতে জল খুব বাড়িতেছে, তবে স্বীকার করিতেই হয় যে পর্বতে প্ৰবল বৃষ্টি হইতেছে; ইহাই কাৰ্যলিঙ্গক অনুমান। এই অনুমানের দ্বারাই জ্ঞানেন্দ্ৰিয়ের উৎপত্তি জানা যায় ; যেহেতু অন্য কারণ বস্তু নাই, তাই স্বীকার করিতেই হয়, সূক্ষ্ম মহাভূত বা পঞ্চতন্মাত্র, অর্থাৎ শব্দ, স্পৰ্শ, রূপ, রস ও গন্ধ হইতেই জ্ঞানেন্দ্ৰিয়সকলের উৎপত্তি হয়। এই জন্যই স্বীকার করিতে হয়, অর্থ বা শব্দাদি বিষয়ই ইন্দ্ৰিয়সকলের কারণ, এবং ইন্দ্ৰিয় হইতে বিষয়সকল সূক্ষ্মতর ও ব্যাপকতর। রামমোহন নিজেও তাই স্বীকার করিয়াছেন ; সেই জন্যই তিনি কলাতত্ত্বের বর্ণনাকালে তন্মাত্ৰসকলকে অর্থাৎ ‘শব্দাদিকে কলা বলিয়াছেন।