পাতা:বেদান্তগ্রন্থ - রামমোহন রায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(уи) criffar কর্মে ফলাকাজক্ষা বা কর্তৃত্ববোধ রামমোহনের ছিল না । এই স্থলে অপর একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাইতে পারে। বেদান্তসারে এবং ব্ৰহ্মসূত্রে রামমোহন জগৎকে রজ্জ্বসৰ্পের মত ভ্ৰম বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। জগৎ যদি ভ্ৰম হয়, তবে জগতের মানুষও ভ্ৰম, ইহাই মানিতে হয় ; তবে মানুষের কল্যাণে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করিয়াছিলেন কেন ? উত্তর এই-অদ্বৈতবেদান্তের আচার্যের জগৎকে ভ্ৰম স্বীকার করিয়াও তার ব্যবহারিক অস্তিত্ব মানিয়াছেন। ভগবান মনু ব্ৰহ্মই একমাত্র সত্য, ইহা বলিয়াও মানুষের জন্য ধর্মনীতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, গাৰ্হস্থ্যনীতি এবং পরিশেষে সাধনপদ্ধতি প্ৰণয়ন করিয়াছেন। রামমোহন “চারি প্রশ্ন’ নামক পুস্তকে প্ৰথম প্রশ্নের উত্তরে লিখিয়াছেন— “যেনোপায়েন দেবেশি, লোকশ্ৰেয়ঃ সমশ্বতে। তদেব কাৰ্য্যং ব্ৰহ্মজ্ঞৈরেষ ধর্ম; সনাতন: || ( মহানির্বাণ তন্ত্র ) । হে দেবেশি, যে যে উপায়ের দ্বারা লোকের শ্ৰেয়ঃ প্ৰাপ্তি হয়, তাহাই কেবল ব্রহ্মনিষ্টের কর্তব্য ।” ( রামমোহনকৃত অনুবাদ ) ব্ৰহ্মনিষ্ট ব্যক্তি যখন লোক কল্যাণ সাধন করেন, তখনও তিনি নিজেকে অকৰ্তাই জানেন, ইহাই বিশেষ কথা । আরো বক্তব্য এই; ব্ৰহ্মচিন্তা করিতে করিতে ব্ৰহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তির আহস্তামিমতা বোধ বিলীন হইয়া যায় ; তার ফলে স্বাৰ্থ বুদ্ধি বিগলিত হয়, বিষয়প্রবণতা নির্মল হয়, তাহাতে মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা উপজিত হয় ; মৈত্রী, করুণা তার স্বভাব সিদ্ধ হইয়া যায়, লোককল্যাণও সুতরাং তার প্ৰকৃতিগতই হয়। অর্থাৎ তাহারা যাহা করেন, তাহা লোককল্যাণই হয়। বেদান্তী সন্ন্যাসী এবং গৃহীর মধ্যে এই অবস্থাপ্ৰাপ্ত লোক হয়তো অনেকেই দেখিয়াছেন। শঙ্করবেদান্ত ও রামমোহনবেদান্তের বিভেদ ভগবান শঙ্করের নিকট হিন্দু ভারত চিরকৃতজ্ঞ। তিনি দশোপনিষদ ভাষ্য ও ব্ৰহ্মসূত্র ভ্যান্য লিখিয়া আত্মতত্ত্ব, ব্ৰহ্মতত্ত্ব, প্রচার করেন। নিগুৰ্ণ ব্ৰহ্মা, সগুণ ব্ৰহ্মোপাসনাতত্ত্ব, ছন্দোগো বর্ণিত উপাসনাসকলের তত্ত্ব, এ সকলই তিনি প্ৰকাশিত করেন। গীতাভাষ্য লিখিয়া ভগবৎতত্ত্বও তিনি প্রচার করেন। তিনি ছিলেন বেদমাৰ্গী, তাই বেদের নির্দেশ লঙ্ঘন করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল