পাতা:বেদান্তগ্রন্থ - রামমোহন রায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(RO) বেদান্তগ্ৰন্থ করেন নাই! কৌপীনখণ্ড তো গৃহী নিজে বয়ন করেন নাই! যাহারা তণ্ডুল ও শাক উৎপন্ন করিয়াছে, বস্ত্ৰ বয়ন করিয়াছে, সেই কৃষক, মজুৱা, তন্তুবায়-এর সহিত গৃহী, তথা অত্যাশ্রমী সংপৃক্ত নহেন কি ? তাহাদিগকে অত্যাশ্রমী কিছু দিয়াছেন কি? প্ৰাচীনকালে মানুষে মানুষে এই সম্পর্ক কিন্তু প্ৰকারান্তরে স্বীকৃত হইয়াছিল। রাজশক্তির আশ্রয়ে নিরাপদে থাকিয়া অত্যাশ্রমী মোক্ষলাভ করিতেন, কৃষক ও তন্তুরায় নিজ নিজ কাৰ্য করিত এবং ধর্মসাধনও করিত। তাই ভগবান মনু ব্যবস্থা দিলেন, সকল মানুষের পুণ্যের এক ষষ্টাংশ রাজা পাইবেন । ইহা মানুষে মানুষে সম্পর্কের স্বীকার ভিন্ন কিছুই নহে। আজ রাজশক্তি নাই; আছে। রাষ্ট্ৰশক্তি। ঐ যে সন্ন্যাসী বিশাল ভারতের যে কোন স্থানে বসিয়া সমাধিতে ডুবিয়া যাইতেছেন, তাহাকে পাহারা দিতেছে কে ? হিমালয়ের উচ্চ শৃঙ্গে প্ৰবল তুষার ঝঞ্চার মধ্যে দাড়াইয়া ঐ যে ভারতীয় সৈনিক অতন্ত্র প্রহরাতে নিযুক্ত, সে-ই সন্ন্যাসীকে নিরাপদে রাখিতেছে ; সৌরাষ্ট্রের নিম্নে সমুদ্রে ভাসমান ঐ যে রণতরী যাহা সমগ্ৰ পশ্চিম সাগর অতিক্ৰম করিয়া দক্ষিণ সাগর পার হইয়া বাংলা দেশের দক্ষিণ প্ৰান্ত পর্যন্ত ছুটিতেছে, সেই রণতরীর প্রতিটি নৌসৈনিক ঐ সন্ন্যাসীকে রক্ষা করিতেছে না কি ? আজিকার যাহারা মনু (Law giver), তাহারা বলেন না কি, সন্ন্যাসী ও গৃহী, সৈনিক ও কৃষক, ব্ৰাহ্মণ ও হরিজন, দেশের প্রতিজন, একই কল্যাণারাষ্ট্রের সমান অংশীদার ? সুতরাং নিঃসঙ্গ সাধনাই ব্ৰহ্মপ্ৰাপ্তির । একমাত্র পথ নহে। সর্বসাধারণজন পরমেশ্বরেরই, ইহা মনে রাখিয়া সাধনা করাও ব্ৰহ্মপ্ৰাপ্তির আর একপথ। রামমোহনই প্ৰথম এই সাধনার উপর গুরুত্ব দিয়াছেন ; তার বেদান্তে এই সাধনাই বিবৃত হইয়াছে। গ্রন্থাবলীর দ্বিতীয় সংস্করণের ৫২৫ পৃষ্ঠায় রামমোহন লিখিয়াছেন “মানুষ্যের যাবৎ ধর্ম দুই মূলকে আশ্রয় করিয়া থাকেন ; এক এই যে, সকলের নিয়ন্তা পরমেশ্বরেতে নিষ্ঠা রাখা ; দ্বিতীয় এই যে, পরস্পর সৌজন্যে এবং সাধু ব্যবহারেতে কাল হরণ করা। পরমেশ্বরকে এক নিয়ন্ত প্ৰভু জ্ঞান করা, আর তাহার সর্বসাধারণজনেতে স্নেহ রাখা আমাদিগকে পরমেশ্বরের কৃপাপাত্ৰ করিতে পারে।” এই বাক্যে যাহা বলা হইল, তাহ রামমোহনবেদান্তের মূল সুত্র। রামমোহনের মতে, ব্ৰহ্মে নিষ্ঠা এবং সর্বসাধারণজনেতে স্নেহ ব্ৰহ্মসাধনার দুই অবলম্বন। ব্রহ্মনিষ্ঠার সঙ্গে সর্বসাধারণজনেতে স্নেহ, ইহাই শাস্করবেদান্ত ও রামমোহনবেদান্তের দ্বিতীয় বিভেদকারণ । জিজ্ঞাসা করা যায়, রামমোহনের