পাতা:বেলা অবেলা কালবেলা - জীবনানন্দ দাশ.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৩:  আমাকে একটি কথা দাও
আমাকে একটি কথা দাও যা আকাশের মতো
সহজ মহৎ বিশাল,
গভীর;—সমস্ত ক্লান্ত হতাহত গৃহবলিভুকদের রক্তে
মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন;
আমি যাকে আবহমান কাল ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর
সেই রাত্রির নক্ষত্রালোকিত নিবিড় বাতাসের মতো:
সেই দিনের—আলোর অন্তহীন এঞ্জিন-চঞ্চল ডানার মতন
সেই উজ্জ্বল পাখিনীর—পাখির সমস্ত পিপাসাকে যে
অগ্নির মতো প্রদীপ্ত দেখে অস্তিমশরীরিণী মোমের মতন।

১৩:  তোমাকে
মাঠের ভিড়ে গাছের ফাঁকে দিনের রৌদ্র অই;
কুলবধূর বাহরাশ্রয়িতার মতন অনেক উড়ে
হিজল গাছে জামের বনে হলুদপাখির মতো
রূপসাগরের পার থেকে কি পাখনা বাড়িয়ে
বাস্তবিকই রৌদ্র এখন? সত্যিকারের পাখি?
কে যে কোথায় কার হৃদয়ে কখন আঘাত করে।
রৌদ্রবরণ দেখেছিলাম কঠিন সময়-পরিক্রমার পথে—
নারীর,—তবু ভেবেছিলাম বহিঃপ্রকৃতির।
আজকে সে-সব মীনকেতনের সাড়ার মতো, তবু
অন্ধকারের মহাসনাতনের থেকে চেয়ে
আশ্বিনের এই শীত স্বাভাবিক ভোরের বেলা হলে
বলে: ‘আমি রোদ কি ধূলো পাখি না সেই নারী?’
পাতা পাথর মৃত্যু কাজের ভূকন্দরের থেকে আমি শুনি;
নদী শিশির পাখি বাতাস কথা ব’লে ফূরিয়ে গেলে পরে
শান্ত পরিচ্ছন্নতা এক এই পৃথিবীর প্রাণে
সফল হতে গিয়েও তবু বিষণ্নতার মতো।