পাতা:বেলা অবেলা কালবেলা - জীবনানন্দ দাশ.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছায়ায় আশ্চর্য সব বৃত্তের পরিধি রয়ে গেছে। কেউ দেখে—কেউ তাহা দেখে নাকো—আমি দেখি নাই । তবু তার অবলঙ কালো টেবিলের পাশে আধাআধি চাদনীর রাতে মনে পড়ে আমিও বসেছি একদিন । কোথাকার মহিলা সে ? কবেকার—ভারতী নর্ডিক গ্রীক মুক্কিম মার্কিন ? অথবা সময় তাকে সনাক্ত করে না অার ; সর্বদাই তাকে ঘিরে, আধোঅন্ধকার ; চেয়ে থাকি,—তবুও সে পৃথিবীর ভাষা ছেড়ে পরিভাষাহীন। মনে পড়ে সেখানে উঠোনে এক দেবদারু গাছ ছিল । তারপর সূর্যালোকে ফিরে এসে মনে হয় এই সব দেবদারু নয়। সেইখানে তমুরার শব্দ ছিল। পৃথিবীতে দুন্দুভি বেজে ওঠে—বেজে ওঠে; স্বর তান লয় গান আছে পৃথিবীতে জানি, তবু গানের হৃদয় নেই। একদিন রাত্রি এসে সকলের ঘুমের ভিতরে আমাকে একাকী জেনে ডেকে নিল—অদ্য-এক ব্যবহারে মাইলটাক দূরে পুরোপুরি । সবি আছে—খুব কাছে ; গোলকধাঁধার পথে ঘুরি তবুও অনন্ত মাইল তারপর—কোথাও কিছুই নেই বলে। অনেক আগের কথা এই সব—এই সময় বৃত্তের মতো গোল ভেবে চুরুটের আস্ফোটে জানুহীন, মলিন সমাজ সেই দিকে অগ্রসর হয় রোজ-একদিন সেই দেশ পাবে। সেই নারী নেই আর ভুলে তারা শতাব্দীর অন্ধকার ব্যসনে ফুরাবে।