হইল—মধ্যাহ্নের রবি পশ্চিম গগনে ঢলিয়া পড়িল। জো ক্ষুৎপিপাসায় একান্ত কাতর হইল। অজ্ঞাত ফল ও কন্দ যাহা পাইল, তাহাই আহার করিয়া সে কিয়ৎপরিমাণে ক্ষুন্নিবৃত্তি করিয়া আবার অগ্রসর হইল। তাহার মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, বন্ধুগণ কিছুতেই তাহাকে ত্যাগ করিয়া যাইবেন না। ভিক্টোরিয়া দর্শনের আশায় তাই সে এক একবার কাতর নয়নে আকাশের দিকে চাহিতে লাগিল।
ক্রমেই কণ্টকে বিদ্ধ হইয়া তাহার দেহ বহু স্থানে ক্ষত বিক্ষত হইয়া উঠিল। চরণতল রুধিররঞ্জিত হইল। জো তখনো অগ্রসর হইতে লাগিল। সে বনের অন্ত ছিল না—সে অজ্ঞাত পথের শেষ ছিল না। সমস্ত দিন এইরূপে চলিয়া সন্ধ্যার প্রাক্কালে জো হ্রদের তীরে আসিয়া দাঁড়াইল। শত সহস্র মশক ও নানাবিধ কীট পতঙ্গ তাহাকে আক্রমণ করিল। অর্দ্ধ ইঞ্চি দীর্ঘ এক একটা ভীষণ পিপীলিকা তাহাকে দংশন করিতে লাগিল। দুই ঘণ্টার মধ্যেই উহারা জো’র কোট ও প্যাণ্টালুন কাটিয়া টুকরা টুকরা করিয়া দিল! জো দংশন-জ্বালায় উন্মত্তবৎ ইতস্ততঃ ভ্রমিতে লাগিল। রজনী যতই গভীর হইতে লাগিল, হিংস্র জন্তুদিগের ভয়াবহ গর্জ্জন ততই শ্রুত হইতে আরম্ভ করিল। অস্ত্রহীন সহায়হীন ক্ষুৎপিপাসিত শ্রান্ত জো রজনীর মত একটি বৃক্ষশিরে আশ্রয় লইল।
প্রভাতে সে হ্রদে অবগাহন করিয়া স্নান করিল এবং কতকগুলি বৃক্ষপত্র আহার করিয়া পুনরায় পথ চলিতে লাগিল।