ক্রমে তাহাও অসম্ভব হইয়া উঠিল। জো অবসন্ন দেহে একটি বৃক্ষমূলে বসিয়া উদ্ধারের উপায় চিন্তা করিতে করিতে অকস্মাৎ দেখিল, সেই নিবিড় বনের মধ্যে কতকগুলি কাফ্রি বিষ-বাণ প্রস্তুত করিতেছে। জো নিঃশব্দে একটা নিকটবর্ত্তী ঝোপে অন্তরালে লুকাইল। পরক্ষণেই দেখিল, চ্যাড-হ্রদের ৭০।৮০ হস্ত মাত্র উপরে ভিক্টোরিয়া ভাসিতেছে। জো কাফ্রিদিগের ভয়ে চীৎকার করিতে সাহস পাইল না—ঝোপের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আত্মপ্রকাশও করিতে পারিল না। তাহার গণ্ড বহিয়া ঝর ঝর করিয়া অশ্রুধারা পড়িতে লাগিল। সে অশ্রু নিরাশার অশ্রু নহে—কৃতজ্ঞতার অশ্রু।
অল্পক্ষণ পরই কাফ্রিগণ সে বন ত্যাগ করিল। জো ঝোপ হইতে বাহির হইয়া হ্রদের তীরে দৌড়াইয়া গেল। ভিক্টোরিয়া তখন অনেক ঊর্দ্ধে উঠিয়া গিয়াছে। জো ভাবিল উহা নিশ্চয়ই আবার নিকটে আসিবে। সে চঞ্চল হৃদয়ে অপেক্ষা করিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পর বেলুন আবার সেই দিকে দেখা দিল বটে, কিন্তু প্রবল বায়ুকর্ত্তৃক তাড়িত হইয়া বেগে পূর্ব্বদিকে চলিয়া গেল।
জো উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াইতে লাগিল—চিৎকার করিয়া কত ডাকিল। কিন্তু বেলুন হইতে কেহ তাহা শুনিতে পাইল না। হতভাগ্য জো তখন দুই হস্তে বক্ষ চাপিয়া হতাশ হৃদয়ে বসিয়া পড়িল। সে পুনরায় দৌড়াইতে লাগিল। তখন রজনী প্রায় সমাগত হইয়াছিল। জো দৌড়াইতে দৌড়াইতে অকস্মাৎ কর্দ্দম মধ্যে পতিত হইল।