পাতা:বৈকুণ্ঠের খাতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম দৃশ্য।

রামায়ণ গানে তপঃপ্রভাব উৎসারিত করিয়া দিতেন; তখন সকল জ্ঞান, সকল বিদ্যা, সংসারের সকল কর্ত্তব্য, জীবনের সকল আনন্দ সাধনার সামগ্রী ছিল। তখন গৃহাশ্রমও আশ্রম ছিল, অরণ্যাশ্রমও আশ্রম ছিল। আজ যে কুলত্যাগিনী সঙ্গীত বিদ্যা নাট্যশালায় বিদেশী বংশীর কাংস্যকণ্ঠে আর্ত্তনাদ করিতেছে, প্রমোদালধে সুরা সরোবরে স্খলিতচরণে আত্মহত্যা করিয়া মরিতেছে, সেই সঙ্গীত একদিন ভরতমুনির তপোবলে মুত্তিমান্ হইয়া স্বৰ্গকে স্বর্গীয় করিয়া তুলিয়াছিল, সেই সঙ্গীত সাধকশ্রেষ্ঠ নারদের ধীণাতন্ত্রী হইতে শুভ্ররশ্মিরাশির ন্যায় বিচ্ছুরিত হইয়া বৈকুণ্ঠাধিপতির বিগলিত পাদপদ্মনিসান্দিত পুণ্য নিঝরিণীকে ম্লান মর্ত্তালোকে প্রবাহিত করিয়াছিল। হে দুর্ভাগিণা ভারতভূমি, আজ তুমি কৃশকায় দীনপ্রাণ রোগজীর্ণ শিশুদিগের ক্রীড়াভূমি; আজ তোমার যজ্ঞবেদীর পুণ্য মৃক্তিকা লইয়া অবোধগণ পুণ্ডলিকা নির্ম্মাণ করিতেছে; আজ সাধনাও নাই সিদ্ধিও নাই; আজ বিদ্যার স্থলে বাচালতা; বীর্য্যের স্থলে অহঙ্কার, এবং তপস্যার স্থলে চাতুরী বিরাজ করিতেছে। যে বজ্রবক্ষ বিপুল তরণী একদিন উত্তাল তরঙ্গভেদ করিয়া মহাসমুদ্র পার হইত, আজ সে তরণীর কর্ণধার নাই; আমরা কয়েকজন বালকে তাহারই কয়েকধণ্ড জীর্ণ কাষ্ঠ লইয়া ভেলা বাঁধিয়া আমাদের পল্লিপ্রান্তেৱ পঙ্কপল্বলে ক্রীড়া করিতেছি এবং শিশুসুলভ মোহে