পাতা:বৈকুন্ঠের উইল - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের উইল S8 আর কিছুই চাই নে, শুধু চাই, তুমি নিশ্চিন্ত হও-সুস্থ হও । এ সময়ে তোমার মনে যেন কোন ক্ষোভ, কোন ক্লেশ না। থাকতে পায়। বৈকুণ্ঠ আবার কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে কহিলেন, কিন্তু বিনােদ ? ভবানী নিমিষমাত্ৰ দেরি না করিয়া কহিলেন, তার কথা তুমি ভেবে না। সে লেখাপড়া শিখচে-নিজের পথ সে নিজে করে নেবে। আর যত মন্দই হোক-গোকুল তাকে ফেলতে পারবে না-ছোটভাইকে সে দেখবেই। বৈকুণ্ঠ আর কথা কহিলেন না। একটা তৃপ্তির নিশ্বাস মোচন করিয়া ধীরে ধীরে পাশ ফিরিয়া শুইলেন। ভবানী সেইখানে একভাবে পাথরের মূৰ্ত্তির মত বসিয়া রহিলেন, নিদারুণ অভিমানে তঁহার দুইচক্ষু বাহিয়া ঝরঝর করিয়া অশ্রু ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। তঁহার গর্ভের সন্তানকে স্বামী বিশ্বাস করিতে পারিলেন না, মন্দ বলিয়া মৃত্যুকালে পুত্রের ন্যায্য অধিকার হইতে তাহাকে বঞ্চিত করিতে চাহিলেন, এ দুঃখ তাহার বক্ষে যেন কি শূল বিদ্ধ করিল, তাহা তিনি একবার চাহিয়াও দেখিলেন না । সে মন্দ হোক, যা হোক, তিনি ত মা ? সে ত তেঁহারই সন্তান ? সেই দুৰ্ভাগ্য সন্তানের অন্ধকার-ভবিষ্যৎ চোখের উপর সুস্পষ্ট দেখিয়া তাহার মাতৃহৃদয় এইবার মাথা কুটিয়া কুটিয়া কঁাদিতে লাগিল। কিন্তু পিছাইয়া পরিত্রাণ পাইবার কোন উপায় কোন দিকে চাহিয়া চোখে পড়িল না । মুমূর্ষু স্বামীর তৃপ্তির জন্য সন্তানের সর্বনাশের পথ যখন নিজেই