পাতা:বৈকুন্ঠের উইল - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዓ বৈকুণ্ঠের উইল। আর কথা কহিলেন না । এবং পরদিন সূৰ্য্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই র্তাহার প্রাণ বাহির হইয়া গেল। তখন অনেকেই, অনেক কথা কহিল। বৈকুণ্ঠ পাকা ব্যবসায়ী ছিলেন, কিন্তু খাঁটি লোক ছিলেন। বিশেষতঃ অত্যন্ত দীন অবস্থা হইতে বড় হইতে পারিয়াছিলেন বলিয়া শত্রু মিত্ৰ দুই তঁার একটু বেশি পরিমাণে ছিল। মিত্রপক্ষের গুণগান অত্যুক্তিকে ছাড়াইয়া গেল। আবার শত্ৰুপক্ষের নিন্দ করিতেও ত্রুটি করিল না । তাহারা কৃপণ বলিয়া, চসম-খোর বলিয়া,বৈকুণ্ঠমুদীর স্ফীত অঙ্গুলির সহিত কদলীকাণ্ডের উপমা দিয়া বোধ করি বেশ একটু আত্মপ্ৰসাদ লাভ করিল। তবে এই একটা অতি তুচ্ছ গুণের কথা তাহারাও অস্বীকার করিল না যে, আর যাই হোক লোকটা জোচ্চোর বাটপাড় ছিল না । নিজের ন্যায্য পাওনার বেশি কাহাকেও কোন দিন একটি তামার পয়সাও ফাকি দেয় নাই । বস্তুতঃ ব্যবসা সম্বন্ধে এই বিদ্যাটিই তিনি বিশেষ করিয়া তার বড় ছেলেকে শিখাইয়া গিয়াছিলেন। বৈকুণ্ঠ বার বার বলিতেন, গোকুল আমার এই কথাটি কোনদিন ভুলিস নে বাবা, যে ঠকিয়ে কখনো মহাজনকে মারা যায় না। তাতে শেষ পৰ্যন্ত নিজেকেই মরতে হয়। নিজের পলিত মস্তকটী দেখাইয়া বলিতেন, এই মাথাটার উপর দিয়ে অনেক ঝড়বৃষ্টি বয়ে গেছে গোকুল, অনেক দুঃখকষ্ট, পেয়েচি, কিন্তু এর জোরে কখনো কারো কাছে মাথা হেঁট করি নি। আমার এই মৰ্য্যাদাটুকু বজায় রাখিস বাবা ! R