পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
পদকর্ত্তাদের পরিচয়

 লুইএর গানে সম্বন্ধ-পদ ‘র’ দিয়াও হয়, আবার ‘ক’ দিয়াও হয়, যথা—‘করণক’, ‘পাটের’। অধিকরণ এ-কার দিয়াও হয়, ‘তেঁ’ দিয়াও হয়, যথা—চীএ, সাণে ও ‘দুখেতেঁ’; ‘এঁ’ দিয়াও হয়, যথা—‘সম্বোহেঁ’। কর্ত্তা ও কর্ম্মে কোন বিভক্তি নাই। ‘পইঠো কাল’ কোন বিভক্তি নাই। ‘সুনু পাখ ভিতি লাহুরে পাস’। ‘গুরু পুচ্ছিঅ’ ইত্যাদি।

২। কিলপাদ

 লুইএর একজন বংশধর কিলপাদ। তিনি আচার্য্য এবং সিদ্ধ ছিলেন। তাঁহার এক পুস্তক আছে ‘দোহাচর্য্যাগীতিকাদৃষ্টি’, এ পুস্তক আমরা পাই নাই, কিন্তু ইহা যে বাঙ্গালীর লেখা ও বাঙ্গালায় লেখা, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

৩। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান

 দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের বাড়ী বাঙ্গালা দেশে। তিনি যে ‘একবীরসাধন’ ও ‘বলবিধি’ নামে দুইখানি বই লিখিয়াছেন, তাহাতে স্পষ্ট করিয়া বাঙ্গালী বলিয়া তাঁহার নাম আছে। এক জায়গায় তিনি আচার্য্য, পিণ্ডপাতিক, বাঙ্গালী, আর এক জায়গায় তিনি মহাচার্য্য, ভিক্ষু ও বাঙ্গালী। দুই জায়গায়ই তাঁহার ভুটিয়া নাম ‘অতিশ’ দেওয়া আছে। কিন্তু অনেক স্থলে তাঁহাকে ভারতবাসী বলিয়াও উল্লেখ করা আছে। যে সকল জায়গায় ভারতবাসী বলিয়া তাঁহার নাম আছে, তাহার অনেক স্থানেও তাঁহার ভুটিয়া নামও দেওয়া আছে। অনেক স্থানে তাঁহাকে হয় কেবল আচার্য্য, কেবল উপাধ্যায় বা কেবল পণ্ডিত বলিয়া বলা আছে; সেখানে ভারতবাসীও নাই, বাঙ্গালীও নাই। ইহাতে মনে হয় যে, দুই জন দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ছিলেন। একজন সামান্য পণ্ডিত বা উপাধ্যায় ছিলেন, আর একজন মহাপণ্ডিত ছিলেন। ইনি বিক্রমশীল বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। ইঁহাকেই তিব্বতরাজ ১০৩৮ সালে বিক্রমশীল হইতে তিব্বতে লইয়া গিয়াছিলেন। তথায় ইনিই বৌদ্ধধর্ম্মের সংস্কার এবং বনপা ধর্ম্মের পুরোহিতদের প্রভাব খর্ব্ব করিয়া দেন। ইনি একজন প্রকাণ্ড পুরুষ ছিলেন, অসাধারণ পণ্ডিত এবং অসাধারণ শক্তিশালী ছিলেন। তিব্বতে গিয়া ইঁহারই নাম ‘অতিশা’ হইয়াছিল। ইঁহাকেই কোন কোন তর্জ্জমায় বঙ্গবাসী বলিয়াছে, কোন কোন তর্জ্জমায় বা ভারতবাসী বলিয়াছে। কারণ, দুই ব্যক্তির ভারতবর্ষীয় নাম দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ও তিব্বতীয় নাম অতিশা হওয়া অনেকটা অসম্ভব। তাই আমরা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে বাঙ্গালী বলিয়া ধরিয়া লইয়াছি। তাঁহার অনেকগুলি সংকীর্ত্তনের পদ ছিল। একখানির নাম ‘বজ্রাসনবজ্রগীতি’, একখানির নাম ‘চর্য্যাগীতি’ এবং একখানির নাম ‘দীপঙ্করশ্রীজ্ঞানধর্ম্মগীতিকা’। আমার এই কথা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে বঙ্গ-সাহিত্যের সৌভাগ্য বড় কম ছিল না। এত বড় প্রকাণ্ড পণ্ডিতও মাতৃভাষায় পদ রচনা করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। আর আমাদের বাঙ্গালা গ্রন্থকারদের মধ্যে মধ্যে যদি সত্য সত্যই আমরা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের মত জগদ্বিখ্যাত লোক পাই, সেটা কি আমাদের আনন্দের ও গৌরবের বিষয় নহে?