পাতা:বৌদ্ধগান ও দোহা.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
পদকর্ত্তাদের পরিচয়

 এতদ্ভিন্ন আরও অনেকগুলি পদাবলীর নাম আমরা পাইয়াছি। যথা,—‘যোগি-প্রসরগীতিকা,’ ‘বজ্রডাকিনীগীতি,’ ‘চিত্তগুহাগম্ভীরার্থগীতি’।

 চৈতন্যদেবের অন্ততঃ ৬ শত বৎসর পূর্ব্বে বাঙ্গালা ও পূর্ব্বভারতে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য্যগণ সংকীর্ত্তনের গান বাঁধিয়া ও নানা রাগ-রাগিণীতে ঐ সমস্ত গান গাইয়া ভারতবাসীর মন বৌদ্ধ ধর্ম্মের দিকে আকৃষ্ট করিতেন। তাঁহারা সচরাচর যে সমস্ত রাগিণীতে গান গাহিতেন, তাদের নাম;—পটমঞ্জরী, গবড়া, অরু, গুঞ্জরী, দেবক্রী, দেশাখ, ভৈরবী, কামোদ, ধানশী, রামক্রী, বরাড়ি, শীবরী, বলাড্ডি, মল্লারি, মালশী, কহ্নুগুঞ্জরী, বাঙ্গালা ইত্যাদি।

 বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য্যেরা গীতিকা ভিন্ন দোঁহা রচনা করিয়াছেন। এক এক সময় মনে হয় যে, এই দোঁহা হইতেই পয়ারের সৃষ্টি হইয়াছে। সরহপাদের ‘কথস্য দোহা’ তন্ত্রের মন্ত্র নির্ম্মাণের উপযোগী। সরহপাদের এক দোঁহাকোষ আমরা পাইয়াছি। সহজযানের মূল তত্ত্বগুলি ব্যাখ্যা করাই এই দোঁহাকোষের উদ্দেশ্য এবং তাই করিতে গিয়া তিনি ব্রাহ্মণদিগের, ঈশ্বরবাদীদিগের, সাংখ্যের, সৌগতদিগের, এমন কি, মহাযানেরও মতসকলের দোষ দিয়াছেন, সে কথা আমি পূর্ব্বে বলিয়াছি। ইহা ছাড়া তাঁর আরও দোঁহাকোষ ছিল, একখানির নাম ‘দোঁহাকোষনামচর্য্যাগীতি,’ একখানির নাম ‘দোঁহাকোষ উপদেশগীতি’। কৃষ্ণাচার্য্যের ‘দোঁহাকোষ’ আমরা পাইয়াছি। উহাও সহজযানের পুস্তক। উড়িষ্যানিবাসী তেলিপের একখানি ‘দোঁহাকোষ’ ছিল। বিরূপেরও একখানি ‘দোঁহাকোষ’ আছে। তাহার পুষ্পিকায় লেখা আছে, উহা একখানি সংগ্রহ মাত্র। বিরূপ, কৃষ্ণ, শাব্দিকপাদ, পূরপাদ এবং শ্রীবৈরোচন, এই কয় জনের দোঁহা লইয়া উহাতে সংগ্রহ করা হইয়াছে।

 এতদ্ভিন্ন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা অনেক সময় গাথা রচনা করিতেন। গাথা রচনার জন্য একটি স্বতন্ত্র ভাষা ছিল। রাজেন্দ্রলাল উহাকে ‘গাথাভাষা’ই বলিয়া গিয়াছেন। সেনার উহাকে মিশ্র সংস্কৃত বলিয়া গিয়াছেন। ঐ ভাষায় যে বহু দিন পর্য্যন্ত গাথা রচনা হইতেছিল, এ কথা কিন্তু কেহই জানিতেন না। ‘শতসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা রত্ন-সঞ্চয়গাথা’ খ্রীষ্টের অন্ততঃ ৬য় শতকে লেখা হয়। কারণ, পাঁচ শতকের পূর্ব্বে ‘শতসাহস্রিকা’ই ছিল কি না, সন্দেহ। এই ভাষা ক্রমে চলিত ভাষার সঙ্গে মিশিয়া অনেক নরম হইয়া আসিয়াছে, অনেকটা চলিত ভাষার মতনই দাঁড়াইয়াছে।

 সরহপাদের ‘দ্বাদশোপদেশগাথা’ নামে একখানি গাথা আছে। সরহপাদের গীতি বাঙ্গালা, দোঁহাও বাঙ্গালা; গাথাও যে বাঙ্গালা হইবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আর একখানি গ্রন্থ আছে, তার নাম ‘সার্দ্ধপঞ্চ-গাথা’; সংগ্রহকারের নাম নাগার্জ্জুনগর্ভ। উহাতে শ্রীগিরি, সবর, কর্ম্মপাদ ও নাড়পাদের গাথা আছে। এরূপ গাথা আরও অনেকে লিখিয়া গিয়াছেন।

 আমার নিজের সংগ্রহে ও তেঙ্গুরে যে সকল গীতি, গাথা ও দোঁহার নাম পাইয়াছি, তাহাদের মোটামুটি একটা বিবরণ দিলাম। কিন্তু ইহা ছাড়াও আরও অনেক গীতি, গাথা