পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়
২৫

শিরোমণি হইতেন না। স্থবির শীলবানের মুখে আমরা এই আশ্চর্য্য বাণী শুনিলাম যে, তিনি চণ্ডাল হইয়াও এই ধর্ম্ম-প্রভাবে সকল মানবের পূজনীয় হইতে পারিয়াছিলেন। ভগবান্ বুদ্ধের ধর্ম্মে ও সঙ্ঘে সাম্যের এই ছাপ বাহির হইতেই দেখা যাইতে পারে।

 বৌদ্ধসাধনা দুঃখ নিবৃত্তির সাধনা। এই জন্য ভগবান্ বুদ্ধ মৈত্রী ও মঙ্গল গ্রহণ করিতে বলিয়াছেন। মৈত্রীভাবনার দ্বারা মানুষের মন উদার ও প্রসন্ন হইয়া থাকে, ইহা নিঃসন্দেহ সত্য কথা। “সমুদয় পুরুষ, সমুদয় স্ত্রী, সমুদয় অনার্য্য, সমুদয় দেবতা, সমুদয় মনুষ্য, সমুদয় অমনুষ্য, সমুদয় প্রেতপিশাচ নরকের জীব শত্রুহীন হউক, বিপদহীন হউক, রোগহীন হউক।” এই প্রকার ভাবনার মধ্যে মনটিকে ডুবাইয়া রাখিলে মন ক্রমশঃ সকল গ্লানি, পাপতাপ হিংসাদ্বেষ হইতে মক্ত হইয়া আনন্দে উজ্জ্বল হইয়া উঠে। সকল আর্য্য ও অনার্য্যকে বুদ্ধ এই ভাবনার মন্ত্র দান করিয়াছেন এবং এই মৈত্রীর মন্ত্র তিনি কৃপণের ধনের মত সম্প্রদায়ের সিন্ধুকের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া এই কথা কাহাকেও বলেন নাই যে পুণ্যমন্ত্রে ইহার অধিকার আছে, ইহার অধিকার নাই। তাঁহার এই মৈত্রীর মন্ত্রই সঙ্ঘের সৃষ্টির মূলে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকিবে। এই মৈত্রী মন্ত্রের উদারতা ও সাম্য বৌদ্ধ সঙ্ঘকে মঙ্গল-শ্রী দান করিয়াছিল।

 বুদ্ধশিষ্যের ভাবনা যেমন মৈত্রী, অনুষ্ঠান তেমনি মঙ্গল। এই মঙ্গলকে বুদ্ধশিষ্য তাহার জীবনের প্রধান পাথেয় বলিয়া জানেন। এই মঙ্গলকে তিনি অঙ্গের অলঙ্কার করিয়া নির্ভয়ে সংসারে বিচরণ করিয়া থাকেন। এই মঙ্গল অর্থাৎ শীল প্রতিপালন দ্বারা তিনি তাঁহার প্রাত্যহিক জীবন সংযত ও সুন্দর করিবেন। এই শীলই তাহার নির্ব্বাণ বা অমৃতপারে প্রবেশের দরজা।

 মঙ্গলকে যিনি স্বীকার করেন, তাহাকে একমাত্র আপনার সুখ ও সুবিধার দিকে চাহিলে চলে না। কারণ যাহা একের পক্ষে মঙ্গল অন্যের পক্ষে মঙ্গল নহে, তাহা প্রকৃত মঙ্গলই নহে। যাহা আজ