পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

পায়। সীতারামের মেয়েটি দুধের মেয়ে, সমস্ত দিন কিছু খায় নাই, তাহার মুখপানে কি তাকান যায়। ইহাদের কিছু কিছু না দিলে ইহারা যাইবে কোথায়?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “বিশেষত, রাজবাটী হইতে যখন তাহারা তাড়িত হইয়াছে, তখন পিতার ভয়ে অন্য কেহ তাহাদের কর্ম্ম দিতে বা সাহায্য করিতে সাহস করিবে না, এ সময়ে আমরাও যদি বিমুখ হই, তাহা হইলে তাহাদের আর সংসারে কেহই থাকিবে না। সাহায্য আমি করিবই, তাহার জন্য ভাবিও না সুরমা, কিন্তু অনর্থক পিতাকে অসন্তুষ্ট করা ভাল হয় না, যাহাতে এ কাজটা গােপনে সমাধা করা যায়, তাহার উপায় করিতে হইবে।”

 সুরমা উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিল,“তােমাকে আর কিছু করিতে হইবে না, আমি সমস্ত করিব, আমার উপরে ভার দাও।” সুরমা নিজেকে দিয়া উদয়াদিত্যকে ঢাকিয়া রাখিতে চায়। এই বৎসরটা উদয়াদিত্যের দুর্ব্বৎসর পড়িয়াছে। অদৃষ্ট তাঁহাকে যে কাজেই প্রবৃত্ত করাইতেছে, সবগুলিই তাঁহার পিতার বিরুদ্ধে; অথচ সে গুলি এমন কাজ যে, সুরমার মত স্ত্রী প্রাণ ধরিয়া স্বামীকে সে কাজ হইতে নিবৃত্ত করিতে পারে না। সুরমা তেমন স্ত্রী নহে; স্বামী যখন ধর্ম্মযুদ্ধে যান, তখন সুরমা নিজের হাতে তাঁহার বর্ম্ম বাঁধিয়া দেয়, তাহার পর ঘরে গিয়া সে কাঁদে। সুরমার প্রাণ প্রতিপদে ভয়ে আকুল হইয়াছে, অথচ উদয়াদিত্যকে সে প্রতিপদে ভরসা দিয়াছে। উদয়াদিত্য ঘাের বিপদের সময় সুরমার মুখের দিকে চাহিয়াছেন, দেখিয়াছেন, সুরমার চোখে জল, কিন্তু সুরমার হাত কাঁপে নাই, সুরমার পদক্ষেপ অটল।

 সুরমা তাঁহার এক বিশ্বস্তা দাসীর হাত দিয়া, সীতারামের মায়ের কাছে ও ভাগবতের স্ত্রীর কাছে বৃত্তি পাঠাইবার বন্দোবস্ত করিয়া দিলেন। দাসী বিশ্বস্তা বটে, কিন্তু মঙ্গলার কাছে একথা গােপন রাখিবার সে