পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

তাঁহার নিতান্ত অনুপযুক্ত কাজ। এবারেও প্রতাপাদিত্য মহিষীকে ডাকিয়া কহিলেন, “সুরমাকে বাপের বাড়ি পাঠাও!” মহিষী কহিলেন, “তাহা হইলে বাবা উদয়ের কি হইবে?” প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “উদয় ত আর ছেলেলানুষ নয়, আমি রাজকার্য্যের অনুরোধে সুরমাকে রাজপুরী হইতে দূরে পাঠাইতে চাই, এই আমার আদেশ।”

 মহিষী উদয়াদিত্যকে ডাকাইয়া কহিলেন, “বাবা উদয়, সুরমাকে বাপের বাড়ি পাঠান যাক্!” উদয়াদিত্য কহিলেন, “কেন মা, সুরমা কি অপরাধ করিয়াছে?”

 মহিষী কহিলেন, “কি জানি বাছা, আমরা মেয়ে মানুষ, কিছু বুঝি না, বউমাকে বাপের বাড়ি পাঠাইয়া মহারাজার রাজকার্য্যে যে কি সুযোগ হইবে, তা মহারাজই জানেন।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “মা, আমাকে কষ্ট দিয়া আমাকে দুঃখী করিয়া রাজকার্য্যের কি উন্নতি হইল? যতদূর কষ্ট সহিবার তাহা ত সহিয়াছি, কোন্ সুখ আমার অবশিষ্ট আছে? সুরমা যে বড় সুখে আছে তাহা নয়। দুই সন্ধ্যা সে ভর্ৎসনা সহিয়াছে, দূর-ছাই সে অঙ্গ-আভরণ করিয়াছে, অবশেষে কি রাজবাড়িতে তাহার জন্য একটুকু স্থানও কুলাইল না! তোমাদের সঙ্গে কি তাহার কোন সম্পর্ক নাই মা? সে কি ভিখারী অতিথি, যে যথন খুসী রাখিবে, যখন খুসী তাড়াইবে? তাহা হইলে মা, আমার জন্যও রাজবাড়িতে স্থান নাই, আমাকেও বিদায় করিয়া দাও।”

 মহিষী কাঁদিতে আরম্ভ করিলেন, কহিলেন “কি জানি বাবা। মহারাজা কখন কি যে করেন, কিছু বুঝিতে পারি না। কিন্তু, তাও বলি বাছা, আমাদের বৌমাও বড় ভাল মেয়ে নয়। ও রাজবাড়িতে প্রবেশ করিয়া অবধি এখানে আর শান্তি নাই। হাড় জ্বালাতন হইয়া গেল। তা,’ ও দিনকতক বাপের বাড়িতেই যাক্ না কেন, দেখা যাক্, কি বল