পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

মিলন নাই, সুখ দুঃখের বিনিময় নাই, বুক ফাটিয়া গেলেও এক মুহূর্ত্তের জন্যও এক বিন্দু প্রেম নাই, স্নেহ নাই, কিছু নাই, কি ভয়ানক ভবিষ্যৎ! সুরমার বুক ফাটিতে লাগিল, মাথা ঘুরিতে লাগিল, চোখের জল শুকাইয়া গেল! উদয়াদিত্য আসিবামাত্র সুরমা তাঁহার পা দুটি জড়াইয়া বুকে চাপিয়া বুক ফাটিয়া কাঁদিয়া উঠিল। সুরমা এমন করিয়া কখন কাঁদে নাই। তাহার বলিষ্ঠ হৃদয় আজ শতধা হইয়া গিয়াছে। উদয়াদিত্য সুরমার মাথা কোলে তুলিয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে সুরমা?” সুরমা উদয়াদিত্যের মুখের দিকে চাহিয়া আর কি কথা কহিতে পারে? মুখের দিকে চায় আর কাঁদিয়া ওঠে। বলিল, “ঐ মুখ আমি দেখিতে পাইব না? সন্ধ্যা হইবে, তুমি বাতায়নে আসিয়া বসিবে, আমি পাশে নাই? ঘরে দীপ জ্বালাইয়া দিবে, তুমি ঐ দ্বারের নিকট আসিয়া দাঁড়াইবে, আর আমি হাসিতে হাসিতে তােমার হাত ধরিয়া আনিব না? তুমি যখন এখানে, আমি তখন কোথায়?” সুরমা যে বলিল “কোথায়” তাহাতে কতখানি নিরাশা, তাহতে কত দূর দূরান্তরের বিচ্ছেদের ভাব! যখন কেবল মাত্র চোখে চোখেই মিলন হইতে পারে তখন মধ্যে কত দূর! যখন তাহাও হইতে পারে না, তখন আর কত দূর! যখন বার্ত্তা লইতে বিলম্ব হয়, তখন আরাে কতদূর! যখন প্রাণান্তিক ইচ্ছা হইলেও এক মুহূর্ত্তের জন্যও দেখা হইবে না, তখন—তখন ঐ পা দুখানি ধরিয়া এমনি করিয়া বুকে চাপিয়া এই মুহূর্ত্তেই মরিয়া যাওয়াতেই সুখ।


সপ্তদশ পরিচ্ছেদ।

 উপাখ্যানের আরম্ভভাগে রুক্মিণীর উল্লেখ করা হইয়াছে, বােধ করি পাঠকেরা তাহাকে বিস্মৃত হন নাই। এই মঙ্গলাই সেই রুক্মিণী। সে রায়গড় পরিত্যাগ করিয়া নাম-পরিবর্ত্তন-পূর্ব্বক যশােহরের প্রান্তদেশে বাস করিতেছে। রুক্মিণীর মধ্যে অসাধারণ কিছুই নাই। সাধারণ নীচ