পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 রুক্মিণী দেখিল যে, প্রতিদিন সুরমার প্রতি রাজার ও রাজমহিষীর বিরাগ বাড়িতেছে। অবশেষে এতদূর পর্য্যন্ত হইল যে সুরমাকে রাজবাটি হইতে বিদায় করিয়া দিবার প্রস্তাব হইয়াছে। তাহার আর আনন্দের সীমা নাই। যখন সে দেখিল তবুও সুরমা গেল না, তখন সে বিদায় করিয়া দিবার সহজ উপায় অবলম্বন করিল।

 রাজমহিষী যখন শুনিলেন মঙ্গলা নামক একজন বিধবা তন্ত্র মন্ত্র ঔষধ নানাপ্রকার জানে, তখন তিনি ভাবিলেন সুরমাকে রাজবাটি হইতে বিদায় করিবার আগে যুবরাজের মনটা তাহার কাছ হইতে আদায় করিয়া লওয়া ভাল। মাতঙ্গিনীকে মঙ্গলার নিকট হইতে গােপনে ঔষধ আনাইতে পাঠাইলেন।

 মঙ্গলা নানাবিধ শিকড় লইয়া সমস্ত রাত ধরিয়া কাটিয়া, ভিজাইয়া, বাঁটিয়া, মিশাইয়া মন্ত্র পড়িয়া বিষ প্রস্তুত করিতে লাগিল।

 সেই নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে, নির্জ্জন নগরপ্রান্তে, প্রচ্ছন্ন কুটির মধ্যে হামানদিস্তার শব্দ উঠিতে লাগিল, সেই শব্দই তাহার এক মাত্র সঙ্গী হইল, সেই অবিশ্রাম একঘেয়ে শব্দ তাহার নর্ত্তনশীল উৎসাহের তালে তালে করতালি দিতে লাগিল, তাহার উৎসাহ দ্বিগুণ নাচিতে লাগিল, তাহার চোখে আর ঘুম রহিল না।

 ঔষধ প্রস্তুত করিতে পাঁচদিন লাগিল। বিষ প্রস্তুত করিতে পাঁচ দিন লাগিবার আবশ্যক করে না। কিন্তু সুরমা মরিবার সময় যাহাতে যুবরাজের মনে দয়া না হয়, এই উদ্দেশে মন্ত্র পড়িতে ও অনুষ্ঠান করিতে অনেক সময় লাগিল।

 প্রতাপাদিত্যের মত লইয়া মহিষী সুরমাকে আরাে কিছু দিন রাজবাটিতে থাকিতে দিলেন। সুরমা চলিয়া যাইবে, বিভা চারিদিকে অকূল পাথার দেখিতেছে। এ কয় দিন সে অনবরত সুরমার কাছে বসিয়া আছে। একটি মলিন ছায়ার মত সে চুপ করিয়া সুরমার সঙ্গে সঙ্গে ফেরে। এক