পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১০৫

বিভার কোন আদর থাকিত, তবে তাহারা বিভাকে লইতে নিজে হইতে লােক পাঠাইত। আমাদের অত ব্যস্ত হইবার আবশ্যক দেখি না!”

 রাজমহিষী বিভাকে দেখিয়া কান্নাকাটি করেন। বিভার সধবা অবস্থায় বৈধব্য কি চোখে দেখা যায়? বিভার করুণ মুখখানি দেখিলে তাঁহার প্রাণে শেল বাজে। তাহা ছাড়া মহিষী তাঁহার জামাতাকে অত্যন্ত ভালবাসেন, সে একটা কি ছেলেমানুষী করিয়াছে বলিয়া তাহার ফল যে এত দূর পর্য্যন্ত হইবে, ইহা তাঁহার কিছুতেই ভাল লাগে নাই। তিনি মহারাজের কাছে গিয়া মিনতি করিয়া বলিলেন, “মহারাজ বিভাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাও!” মহারাজ রাগ করিলেন, কহিলেন “ঐ এককথা আমি অনেক বার শুনিয়াছি, আর আমাকে বিরক্ত করিও না। যখন তাহারা বিভাকে ভিক্ষা চাহিবে, তখন তাহারা বিভাকে পাইবে!” মহিষী কহিলেন, “মেয়ে অধিক দিন শ্বশুরবাড়ি না গেলে দশ জনে কি বলিবে?” প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “আর—প্রতাপাদিত্য নিজে সাধিয়া যদি মেয়েকে পাঠায় আর রামচন্দ্র রায় যদি তাহাকে দ্বার হইতে দূর করিয়া দেয়, তাহা হইলেই বা দশ জনে কি বলিবে?”

 মহিষী কাঁদিতে কাঁদিতে ভাবিলেন, মহারাজা এক এক সময় কি যে করেন তাহার কোন ঠিকানা থাকে না।


ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ।

 মান অপমানের প্রতি রাজা রামচন্দ্র রায়ের অত্যন্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টি। রাজা এক দিন চতুর্দ্দোলায় করিয়া রাস্তায় বাহির হইয়াছিলেন, দুই জন অনভিজ্ঞ তাঁতী তাহাদের কুটীরের সম্মুখে বসিয়া তাঁত বুনিতেছিল, চতুর্দ্দোল দেখিয়া উঠিয়া দাঁড়ায় নাই, রাজা তাহা লইয়া হুলস্থূল করিয়া তুলিয়াছিলেন। একবার যশােহরে তাঁহার শ্বশুরবাড়ির এক চাকরকে তিনি একটা কি কাজের জন্য আদেশ করিয়াছিলেন, সে বেচারা এক