পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
বৌ ঠাকুরাণীর হাট

শুনিতে আর শুনিয়াছিল, কাজে ভুল করিয়াছিল, মহামানী রামচন্দ্র রায় তাহা হইতে সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, শ্বশুরবাড়ির ভৃত্যরা তাঁহাকে মানে না, তাহারা অবশ্য তাহাদের মনিবদের কাছেই এইরূপ শিখিয়াছে, নহিলে তাহারা সাহস করিত না। বিশেষত সেই দিন প্রাতঃকালেই তিনি দেখিয়াছিলেন যুবরাজ উদয়াদিত্য সেই চাকরকে চুপি চুপি কি একটা কথা বলিতেছিলেন—অবশ্য তাঁহাকে অপমান করিবার পরামর্শই চলিতেছিল, নহিলে আর কি হইতে পারে! এক দিন কয়েক জন বালক মাটির ঢিপির সিংহাসন গড়িয়া, রাজা, মন্ত্রী ও সভাসদ সাজিয়া রাজসভার অনুকরণে খেলা করিতেছিল, রাজার কানে যায়, তিনি তাহাদের পিতাদের ডাকিয়া বিলক্ষণ শাসন করিয়া দেন।

 আজ মহারাজা গদির উপরে তাকিয়া ঠেসান দিয়া গুড়গুড়ি টানিতেছেন। সম্মুখে এক ভীরু দরিদ্র অপরাধী খাড়া রহিয়াছে, তাহার বিচার চলিতেছে। সে ব্যক্তি কোনাে সূত্রে প্রতাপাদিত্য ও রামচন্দ্র রায় সংক্রান্ত ঘটনা শুনিতে পায়, ও তাহা লইয়া আপনাআপনির মধ্যে আলােচনা করে, তাহাই শুনিয়া তাহার শত্রুপক্ষের এক জন সে কথাটা রাজার কানে উত্থাপন করে। রাজা মহা খাপা হইয়া তাহাকে তলব করেন। তাহাকে ফাঁসিই দেন, কি নির্ব্বাসনই দেন, এমনি একটা কাণ্ড বাধিয়া গেছে।

 রাজা বলিতেছেন, “বেটা, তোর এত বড় যােগ্যতা!”

 সে কাঁদিয়া কহিতেছে, “দোহাই মহারাজ, আমি এমন কাজ করি নাই!”

 মন্ত্রী কহিতেছেন, “বেটা, প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে আর আমাদের মহারাজের তুলনা।”

 দেওয়ান কহিতেছেন, “বেটা, জানিস্ না, যখন প্রতাপাদিত্যের বাপ প্রথম রাজা হয়, তখন তাহাকে রাজটীকা পাইবার জন্য সে আমাদের