পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১১৯

আমি কি ভাই সত্য বলিতেছিলাম? আমি যে ঠাট্টা করিতেছিলাম, এইটে আর বুঝিতে পারিলে না? ছি প্রিয়তমে!”

 সীতারামের মায়ের কি রােগ হইল, জানি না, আজ কাল প্রায় মাঝে মাঝে সে জামাই-বাড়ি যাইতে লাগিল ও টাকা বাহির করিয়া দিবার বিষয়ে তাহার স্মরণশক্তি একেবারে বিলুপ্ত হইয়া গেল! কাজেই সীতারামকে প্রায় মাঝে মাঝে রুক্মিণীর কাছে আসিতে হইত। আজ কাল দেখা যায় সীতারাম ও রুক্মিণীতে মিলিয়া অতি গােপনে কি একটা বিষয় লইয়া পরামর্শ চলিতেছে। অনেকদিন পরামর্শের পর সীতারাম কহিল, “আমার ভাই অত ফন্দি আসে না। এ বিষয়ে ভাগবতের সাহায্য না লইলে চলিবে না।”

 সেই দিন সন্ধ্যাবেলায় অত্যন্ত ঝড় হইতেছে। রাজবাড়ির ইতস্তত দুম্‌দাম্ করিয়া দরজা পড়িতেছে। বাতাস এমন বেগে বহিতেছে যে, বাগানের বড় বড় গাছের শাখা হেলিয়া ভূমিস্পর্শ করিতেছে। বন্যার মুখে ভগ্ন চূর্ণ গ্রামপল্লীর মত, ঝড়ের মুখে ছিন্নভিন্ন মেঘ ছুটিয়া চলিয়াছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ, ঘন ঘন গর্জ্জন। উদয়াদিত্য চারিদিকের দ্বার রুদ্ধ করিয়া ছােট একটি মেয়েকে কোলে লইয়া বসিয়া আছেন। ঘরের প্রদীপ নিভাইয়া দিয়াছেন। ঘর অন্ধকার। মেয়েটি কোলের উপর ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। সুরমা যখন বাঁচিয়াছিল, এই মেয়েটিকে অত্যন্ত ভালবাসিত। সুরমার মৃত্যুর পর ইহার মা ইহাকে আর রাজবাড়িতে পাঠায় নাই। অনেক দিনের পর সে আজ একবার রাজবাড়িতে বেড়াইতে আসিয়াছিল। সহসা উদয়াদিত্যকে দেখিয়া “কাকা” “কাকা” বলিয়া সে তাঁহার কোলের উপরে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। উদয়াদিত্য তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া তাঁহার শয়নগৃহে লইয়া আসিয়াছেন। উদয়াদিত্যের মনের ভাব এই যে, “সুরমা এই মেয়েটিকে যদি একবার দেখিতে আসে! ইহাকে যে সে বড় ভালবাসিত! এত স্নেহের ছিল, সে কি না আসিয়া থাকিতে