পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 বিভা উদয়াদিত্যের পায়ের কাছে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল। উদয়াদিত্যের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল;—বিভার মাথায় হাত দিয়া তিনি কহিলেন,—“কেন কাঁদিতেছিস? এখানে তাের কি সুখ ছিল বিভা; চারিদিকে কেবল দুঃখ, কষ্ট, শােক। এ কারাগার হইতে পালাইলি—তুই বাঁচিলি!”

 বিভা যখন উঠিল, তখন উদয়াদিত্য কহিলেন, “যাইতেছিস্? তবে আয়। স্বামীগৃহে গিয়া আমাদের একেবারে যেন ভুলিয়া যাস্‌নে। এক এক বার মনে করিস্‌, মাঝে মাঝে যেন সংবাদ পাই।”

 বিভা রামমােহনের কাছে গিয়া কহিল, “এখন আমি যাইতে পারিব না!”

 রামমােহন বিস্মিত হইয়া কহিল, “সে কি কথা মা?”

 বিভা কহিল, “না, আমি যাইতে পারিব না। দাদাকে আমি এখন একলা ফেলিয়া যাইতে পারিব না। আমা হইতেই তাঁহার এত কষ্ট এত দুঃখ, আর আমি আজ তাঁহাকে এখানে ফেলিয়া রাখিয়া সুখ ভােগ করিতে যাইব? যত দিন তাঁহার মনে তিলমাত্র কষ্ট থাকিবে, তত দিন আমিও তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে থাকিব। এখানে আমার মত তাঁহাকে কে যত্ন করিবে?” বলিয়া বিভা কাঁদিয়া চলিয়া গেল।

 অন্তঃপুরে একটা গোলযােগ বাধিয়া উঠিল। মহিষী আসিয়া বিভাকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন; তাহাকে অনেক ভয় দেখাইলেন, অনেক পরামর্শ দিলেন; বিভা কেবল কহিল—“না মা, আমি পারিব না!”

 মহিষী রােষে বিরক্তিতে কাঁদিয়া কহিলেন, “এমন মেয়েও ত কোথাও দেখি নাই!” তিনি মহারাজের কাছে গিয়া সমস্ত কহিলেন। মহারাজ প্রশান্ত ভাবে কহিলেন, “তা, বেশ ত, বিভার যদি ইচ্ছা না হয় ত কেন যাইবে?”

 মহিষী অবাক্ হইয়া, হাত উল্টাইয়া, হাল ছাড়িয়া দিয়া কহিলেন,