পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৩৩

মনে স্বভাবতই বলবান্ আছে, তাহার উপরে তাঁহার মনে হইতে লাগিল, প্রতিহিংসা না লইলে প্রজারা কি মনে করিবে, ভৃত্যেরা কি মনে করিবে, রমাই ভাঁড় কি মনে করিবে? তিনি যখন কল্পনায় মনে করেন, এই কথা লইয়া মাই আর একজন ব্যক্তির কাছে হাসি টিটকারী করিতেছে, তখন তিনি অত্যন্ত অস্থির হইয়া পড়েন।

 একদিন সভায় মন্ত্রী প্রস্তাব করিলেন, “মহারাজ, আপনি আর একটি বিবাহ করুন!”

 রমাই ভাঁড় কহিল, “আর প্রতাপাদিত্যের মেয়ে তাহার ভাইকে লইয়া থাকুক!”

 রাজা রমাইয়ের দিকে চাহিয়া হাসিয়া কহিলেন, “ঠিক বলিয়াছ রমাই।”

 রাজাকে হাসিতে দেখিয়া সকল সভাসদই হাসিতে লাগিল। কেবল ফর্ণাণ্ডিজ বিরক্ত হইল, সে হাসিল না। রামচন্দ্র রায়ের মত লােকেরা সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সততই ব্যস্ত, কিন্তু সম্ভ্রম কাহাকে বলে ও কি করিয়া সম্ভ্রম রাখিতে হয় সে জ্ঞান তাহাদের নাই!

 দেওয়ানজি কহিলেন, “মন্ত্রী মহাশয় ঠিক বলিয়াছেন। তাহা হইলে প্রতাপাদিত্যকে ও তাঁহার কন্যাকে বিলক্ষণ শিক্ষা দেওয়া হইবে।”

 রমাই ভাঁড় কহিল—“এ শুভকার্য্যে আপনার বর্ত্তমান শ্বশুর মহাশয়কে একখানা নিমন্ত্রণ পত্র পাঠাইতে ভুলিবেন না, নহিলে কি জানি তিনি মনে দুঃখ করিতে পারেন!” বলিয়া রমাই চোখ টিপিল। সভাস্থ সকলে হাসিতে লাগিল; যাহারা দূরে বসিয়াছিল, কথাটা শুনিতে পায় নাই, তাহারাও না হাসিয়া কিছুতেই থাকিতে পারিল না।

 রমাই কহিল, “বরণ করিবার নিমিত্তে এয়ােস্ত্রীদের মধ্যে যশােরে আপনার শ্বাশুড়ীঠাকুরুণকে ডাকিয়া পাঠাইবেন। আর মিষ্টান্নমিতরেজনাঃ, প্রতাপাদিত্যের মেয়েকে যখন একথাল মিষ্টান্ন পাঠাইবেন, তখন তাহার সঙ্গে দুটো কাঁচা রম্ভা পাঠাইয়া দিবেন।”