পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৪১

জনের সহিত মন্ত্রণা করিয়া প্রতাপাদিত্যকে ঐ মর্ম্মে এক পত্র লেখা হইল। প্রতাপাদিত্যকে এরূপ চিঠি লেখা বড় সাধারণ সাহসের কর্ম্ম নহে। রামচন্দ্র রায়ের মনে মনে বিলক্ষণ ভয় হইতেছিল। কিন্তু ঢালু পর্ব্বতে বেগে নাবিতে নাবিতে হাজার ভয় হইলেও যেমন মাঝে মাঝে থামা যায় না, রামচন্দ্র রায়ের মনেও সেইরূপ একটা ভাবের উদয় হইয়াছিল!—সহসা একটা দুঃসাহসিকতায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন, শেষ পর্য্যন্ত না পৌঁছিয়া যেন দাঁড়াইতে পারিতেছেন না। রামমোহনকে ডাকিয়া কহিলেন—“এই পত্র যশোহরে লইয়া যা।” রামমোহন যোড়হস্তে কহিল, “আজ্ঞা, না মহারাজ, আমি পারিব না। আমি স্থির করিয়াছি, আর যশোহরে যাইব না। এক যদি পুনরায় মা-ঠাকুরাণীকে আনিতে যাইতে বলেন ত আর একবার যাইতে পারি নতুবা, এ চিঠি লইয়া যাইতে পারিব না।” রামমোহনকে আর কিছু না বলিয়া বৃদ্ধ নয়ানচাঁদের হাতে রাজা সেই পত্রখানি দিলেন। সে সেই পত্র লইয়া যশোহরে যাত্রা করিল।

 পত্র লইয়া গেল বটে, কিন্তু নয়ানচাঁদের মনে বড় ভয় হইল। প্রতাপ আদিত্যের হাতে এ পত্র পড়িলে না জানি তিনি কি করিয়া বসেন। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া মহিষীর হাতে সে এই পত্র দিতে সংকল্প করিল। মহিষীর মনের অবস্থা বড় ভাল নয়। একদিকে বিভার জন্য তাঁহার ভাবনা, আর এক দিকে উদয়াদিত্যের জন্য তাঁহার কষ্ট। সংসারের গোলেমালে তিনি যেন একবারে ঝালাফালা হইয়া গিয়াছেন। মাঝে মাঝে প্রায় তাঁহাকে কাঁদিতে দেখা যায়। তাঁহার যেন আর ঘরকন্নায় মন লাগে না। এইরূপ অবস্থায় তিনি এই পত্রখানি পাইলেন—কি যে করিবেন কিছু ভাবিয়া পাইলেন না। বিভাকে কিছু বলিতে পারেন না; তাহা হইলে সুকুমার বিভা আর বাঁচিবে না। মহারাজের কানে এ চিঠির কথা উঠিলে কি যে অনর্থপাত হইবে তাহার ঠিকানা নাই। অথচ এমন সঙ্কটের অবস্থায় কাহাকে কিছু না বলিয়া, কাহারো নিকট কোন পরামর্শ না লইয়া মহিষী