পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

আপনাকে মলিন দেখিয়া আমাদের মনে আর সুখ নাই! একটি বয়েদ আছে—‘রাত্রি বলে আমি কেহই নই, আমি যাহাকে মাথায় করিয়া রাখিয়াছি সেই চাঁদ, তাহারি সহিত আমি একত্রে হাসি, একত্রে ম্লান হইয়া যাই।’—মহারাজ, আমরাই বা কে, আপনি না হাসিলে আমাদের হাসিবার ক্ষমতা কি? আমাদের আর সুই নাই, জনাব!”

 বসন্তরায় ব্যগ্র হইয়া কহিলেন, “সে কি কথা সাহেব? আমার ত অসুখ কিছুই নাই,—আমি নিজেকে দেখিয়া নিজে হাসি—নিজের আনন্দে নিজে থাকি—আমার অসুখ কি খাঁ সাহেব?”

 খাঁ সাহেব—“মহারাজ এখন আপনার আর তেমন গান বাদ্য শুনা যায় না।”

 বসন্তরায় সহসা ঈষৎ গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “আমার গান শুনিবে সাহেব?”

“আমিই শুধু রইনু বাকি।
যা ছিল তা গেল চলে,
রইল যা’ তা কেবল ফাঁকি।”

 খাঁ সাহেব—“আপনি আর সে সেতার বাজান কই? আপনার সে সেতার কোথায়?”

 বসন্তরায় ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন—“সে সেতার কি নাই, তাহা নয়। সেতার আছে, শুধু তাহার তার ছিঁড়িয়া গেছে, তাহাতে আর সুর মেলে না।” বলিয়া আম্রবনের দিকে চাহিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন।

 কিয়ৎক্ষণ পরে বসন্তরায় বলিয়া উঠিলেন, খাঁ সাহেব একটা গান গাও না—একটা গান গাও, গাও—“তাজবে তাজ নওবে নও।”

 খাঁ সাহেব গান ধরিলেন:—

“তাজবে তাজ নওবে নও।”

 দেখিতে দেখিতে বসন্তরায় মাতিয়া উঠিলেন—আর বসিয়া থাকিতে