পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

আয়। গােটাকতক চুল তুলিয়া দে। তােদের পাকাচুল সবরাহ করিয়া উঠিতে আর ত আমি পারি না ভাই। বয়স হইতে চলিল, ক্রমেই মাথায় টাক পড়িতে চলিল—এখন আর একটা মাথার অনুসন্ধান কর—আমি জবাব দিলাম।” বলিয়া বসন্তরায় হাসিতে লাগিলেন।

 একজন দাসী আসিয়া বসন্তরায়কে কহিল—“রাণী মা আপনাকে একবার প্রণাম করিতে চান।”

 বসন্তরায় মহিষীর ঘরে গেলেন, বিভা কারাগারে গেল।

 মহিষী বসন্তরায়কে প্রণাম করিলেন। বসন্তরায় আশীর্ব্বাদ করিলেন —“মা, আয়ুষ্মতী হও।”

 মহিষী কহিলেন, “কাকা মশায় ও আশীর্ব্বাদ আর করিবেন না। এখন আমার মরণ হইলেই আমি বাঁচি।”

 বসন্তরায় ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “রাম, রাম! ও কথা মুখে আনিতে নাই।”

 মহিষী কহিলেন, “আর কি বলিব কাকা মহাশয়, আমার ঘরকন্নায় যেন শনির দৃষ্টি পড়িয়াছে।”

 বসন্তরায় অধিকতর ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন।

 মহিষী কহিলেন, “বিভার মুখখানি দেখিয়া আমার মুখে আর অন্ন জল রুচে না। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে সে কিছু বলে না, কেবল দিনে দিনে তাহার শরীর ক্ষয় হইয়া যাইতেছে। তাহাকে লইয়া যে আমি কি করিব কিছু ভাবিয়া পাই না!”

 বসন্তরায় অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন। “এই দেখুন কাকা মহাশয়, এক সর্ব্বনেশে চিঠি আসিয়াছে।” বলিয়া এক চিঠি বসন্তরায়ের হতে দিলেন।

 বসন্তরায় সে চিঠি পড়িতে না পড়িতে মহিষী কাঁদিয়া বলিতে লাগিলেন—“আমার কিসের সুখ আছে? উদয়—বাছা আমার কিছু