পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ ঠাকুরাণীর হাট
১৫৯

 “ভালই হইয়াছে—তাের তাহাতে কি?” বলিয়া সে তাহাকে উত্তমরূপে প্রহার করিল—যাহারা ঘরে আগুন লাগাইয়াছিল, এ ব্যক্তি তাহাদের মধ্যে একজন। প্রহার খাইয়া সেই রমণীর মূর্ত্তি অতি ভীষণ হইয়া উঠিল—ক্রুদ্ধ বাঘিনীর মত তাহার চোখ দুটা জ্বলিতে লাগিল, তাহার চুলগুলা ফুলিয়া উঠিল; সে দাঁতে দাঁতে কিড়মিড় করিতে লাগিল, তাহার সেই মুখের উপর বহ্ণিশিখার আভা পড়িয়া তাহার মুখ পিশাচীর মত দেখিতে হইল। সম্মুখে একটা কাষ্ঠখণ্ড জ্বলিতেছিল, সেইটি তুলিয়া লইল, হাত পুড়িয়া গেল, কিন্তু তাহা ফেলিল না, সেই জ্বলন্ত কাষ্ঠ লইয়া তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটিল। কিছুতে ধরিতে না পারিয়া—সেই কাষ্ঠ তাহার প্রতি ছুঁড়িয়া মারিল।


ত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 সীতারাম যুবরাজকে সঙ্গে করিয়া খালের ধারে লইয়া গেল; সেখানে একখানা বড় নৌকা বাঁধা ছিল, সেই নৌকার সম্মুখে উভয়ে গিয়া দাঁড়াইলেন। তাহাদের দেখিয়া নৌকা হইতে এক ব্যক্তি তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিয়া কহিল, “দাদা, আসিয়াছিস্?” উদয়াদিত্য একেবারে চমকিয়া উঠিলেন—সেই চির পরিচিত স্বর, যে স্বর বাল্যের স্মৃতির সহিত, যৌবনের সুখ দুঃখের সহিত জড়িত—পৃথিবীতে যতটুকু সুখ আছে, যতটুকু আনন্দ আছে যে স্বর তাহারি সহিত অবিচ্ছিন্ন! এক এক দিন কারাগারে গভীর রাত্রে বিনিদ্র নয়নে বসিয়া সহসা স্বপ্নে বংশিধ্বনির ন্যায় যে স্বর শুনিয়া চমকিয়া উঠিতেন—সেই স্বর! বিস্ময় ভাঙিতে না ভাঙিতে বসন্তরায় আসিয়া তাঁহাকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিলেন। উভয়ের দুই চক্ষু বাষ্পে পূরিয়া গেল। উভয়ে সেই খানে তৃণের উপর বসিয়া পড়িলেন। অনেক ক্ষণের পর উদয়াদিত্য কহিলেন, “দাদা মহশয়!” বসন্তরায় কহিলেন, “কি দাদা!” আর কিছু কথা