পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

আমােদ করিয়া চারিদিক পূর্ণ করিয়া রাখেন। চারিদিকে উল্লাস, সদ্ভাব, সেই খানে গেলেই আমি ভুলিয়া যাইতাম যে, আমি যশােহরের যুবরাজ। সে কি আরামের ভুল! অবশেষে আমার বয়স যখন ১৮ বৎসর, একদিন রায়গড়ে বসন্তের বাতাস বহিতেছিল, চারিদিকে সবুজ কুঞ্জবন ও সেই বসন্তে আমি রুক্মিণীকে দেখিলাম।”

 সুরমা বলিয়া উঠিল “ও কথা অনেক বার শুনিয়াছি!”

 উদয়াদিত্য, “আর একবার শুন। মাঝে মাঝে এক একটা কথা প্রাণের মধ্যে দংশন করিতে থাকে, সে কথাগুলা যদি বাহির করিয়া না দিই, তবে আর বাঁচিব কি করিয়া। সেই কথাটা তােমার কাছে এখনাে বলিতে লজ্জা করে, কষ্ট হয়, তাই বারবার করিয়া বলি, যে দিন আর লজ্জা করিবে না, কষ্ট হইবে না, সে দিন বুঝিব আমার প্রায়শ্চিত্ত শেষ হইল, সে দিন আর বলিব না।”

 সুরমা, “কিসের প্রায়শ্চিত্ত প্রিয়তম? তুমি যদি পাপ করিয়া থাক ত সে পাপের দোষ, তােমার দোষ নহে। আমি। তােমাকে জানি না? অন্তর্যামী কি তােমার মন দেখিতে পান না?”

 উদয়াদিত্য বলিতে লাগিলেন, “রুক্মিণীর বয়স আমার অপেক্ষা তিন বৎসরের বড়। সে একাকিনী বিধবা। দাদা মহাশয়ের অনুগ্রহে সে রায়গড়ে বাস করিতে পাইত। মনে নাই, সে আমাকে কি কৌশলে প্রথমে আকর্ষণ করিয়া লইয়া গেল। তখন আমার মনের মধ্যে মধ্যাহ্নের কিরণ জ্বলিতেছিল। এত প্রখর আলো যে, কিছুই ভাল করিয়া দেখিতে পাইতেছিলাম না, চারিদিকে জগৎ জ্যোতির্ম্ময় বাষ্পে আবৃত। সমস্ত রক্ত যেন মাথায় উঠিতেছিল; কিছুই আশ্চর্য্য, কিছুই অসম্ভব মনে হইত না; পথ, বিপথ, দিক্ বিদিক্‌ সমস্ত এক আকার ধারণ করিয়াছিল ইহার পুর্ব্বেও আমার এমন কখন হয় নাই, ইহার পরেও আমার এমন কখন হয় নাই। জগদীশ্বর জানেন, তাঁহার কি উদ্দেশ্য সাধন করিতে এই ক্ষুদ্র দুর্ব্বল