পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

“মা।” ঐ কথাতেই তাহার মা সমস্ত বুঝিতে পারিলেন, বিভাকে বুকে টানিয়া লইয়া কহিলেন, “কি বাছা!” বিভা কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া অবশেষে কহিল, “মা, তুই আমাকে কবে পাঠাইবি মা!” বলিতে বলিতে বিভার মুখ কান লাল হইয়া উঠিল। মা ঈষৎ হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন —“কোথায় পাঠাইব বিভু!” বিভা মিনতির স্বরে কহিল—“বল না মা।” মহিষী কহিলেন, “আর কিছু দিন সবুর কর বাছা। শীঘ্রই পাঠাইব।” বলিতে বলিতে তাঁহার চক্ষে জল আসিল।

ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 বহুদিনের পর উদয়াদিত্য রায়গড়ে আসিলেন, কিন্তু আগেকার মত তেমন আনন্দ আর পাইলেন না। মনের মধ্যে একট ভাবনা চাপিয়া ছিল, তাই কিছুই তেমন ভাল লাগিল না। তিনি ভাবিতেছিলেন, দাদা মহাশয় যে কাজ করিয়াছেন, তাঁহার যে কি হইবে তাহার ঠিকানা নাই, পিতা যে সহজে নিষ্কৃতি দিবেন এমন ত বােধ হয় না। আমার কি কুক্ষণেই জন্ম হইয়াছিল! তিনি বসন্তরায়ের কাছে গিয়া কহিলেন, “দাদা মহাশয়, আমি যাই, যশােহরে ফিরিয়া যাই।” প্রথম প্রথম বসন্তরায় গান গাহিয়া হাসিয়া এ কথা উড়াইয়া দিলেন; তিনি গাহিলেন—

আরকি আমি ছাড়্‌ব তােরে!
মন দিয়ে মন নাইবা পেলেম
জোর করে রাখিব ধােরে।
শূন্য ক’রে হৃদয়-পুরী প্রাণ যদি করিলে চুরি
তুমিই তবে থাক সেথায়
শূন্য হৃদয় পূর্ণ কোরে।

 অবশেষে উদয়াদিত্য বার বার কহিলে পর বসন্তরায়ের মনে আঘাত