পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

আপনার রাজ্য চাহি না—আপনার সিংহাসন হইতে আমাকে অব্যাহতি দিন—এই ভিক্ষা।”

 প্রতাপাদিত্যও তাহাই চান, তিনি কহিলেন—“তুমি যাহা বলিতেছ, তাহা যে সত্যই তােমার হৃদয়ের ভাব তাহা কি করিয়া জানিব?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“দুর্ব্বলতা লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছি বটে, কিন্তু আজ পর্য্যন্ত নিজের স্বার্থের জন্য কখনাে মিথ্যা কথা বলি নাই। বিশ্বাস করেন যদি, আজ আমি মা-কালীর চরণ স্পর্শ করিয়া শপথ করিব— আপনার রাজ্যের এক সূচ্যগ্রভূমিও আমি কখনাে শাসন করিব না—সমরাদিত্যই আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী।”

 প্রতাপাদিত্য সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন—“তুমি তবে কি চাও?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“মহারাজ, আমি আর কিছুই চাই না—কেবল আমাকে পিঞ্জররুদ্ধ পশুর মত গারদে পূরিয়া রাখিবেন না! আমাকে পরিত্যাগ করুন, আমি এখনি কাশী চলিয়া যাই। আর একটি ভিক্ষা— আমাকে কিঞ্চিৎ অর্থ দিন—আমি সেখানে দাদামহাশয়ের নামে এক অতিথিশালা ও একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করিব।”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন—“আচ্ছা, তাহাই স্বীকার করিতেছি।”

 সেই দিনই উদয়াদিত্য মন্দিরে গিয়া প্রতাপাদিত্যের সম্মুখে শপথ করিয়া কহিলেন—“মা কালী, তুমি সাক্ষী থাক, তােমার পা ছুঁইয়া আমি শপথ করিতেছি—যত দিন আমি বাঁচিয়া থাকিব, যশোহরের মহারাজের রাজ্যের এক তিলও আমি আমার বলিয়া গ্রহণ করিব না—যশােহরের সিংহাসনে আমি বসিব না, যশােহরের রাজদণ্ড আমি স্পর্শও করিব না। যদি কখনাে করি, তবে এই দাদা মহাশয়ের হত্যার পাপ সমস্ত যেন আমারই হয়?” বলিয়া শিহরিয়া উঠিলেন।

 মহারাণী যখন শুনিলেন, উদয়াদিত্য কাশী চলিয়া যাইতেছেন, তখন