পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৯৩

যখন নৌকা লাগাইলেন, তখন বিকাল হইয়া গিয়াছে। উদয়াদিত্য মনে করিলেন কাল প্রাতে লোক পাঠান যাইবে—বিভার মনের ইচ্ছা আজই সংবাদ দেওয়া হয়।

ষট্‌ত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 আজ লােজনেরা ভারি ব্যস্ত। চারিদিকে বাজনা বাজিতেছে। গ্রামে যেন একটি উৎসব পড়িয়াছে। একে বিভার প্রাণে অধীর আনন্দ জাগিতেছে, তাহার পরে চারিদিকে বাজনার শব্দ শুনিয়া তাহায় হৃদয় যেন উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। পাছে উদয়াদিত্যের কাছে তাহার এই অত্যধিক আনন্দ প্রকাশ হইয়া পড়ে, এই জন্য কত কষ্টে সে হাসি নিবারণ করিয়া রাখিয়াছে! উদয়াদিত্য নদী-তীরে উৎসবের ভাব দেখিয়া কি হইতেছে জানিবার জন্য গ্রামে বেড়াইতে গেলেন।

 এমন কিছুক্ষণ গেল। একজন তীর হইতে জিজ্ঞাসা করিল— “কাহাদের নৌকা গা?” নৌকা হইতে রাজবাটীর ভৃত্যেরা বলিয়া উঠিল।—“কেও? রামমােহন যে? আরে, এস এস!” রামমােহন তাড়াতাড়ি নৌকায় প্রবেশ করিল। নৌকায় একলা বিভা বসিয়া আছে, রামমােহনকে দেখিয়া হর্ষে উচ্ছ্বসিত হইয়া কহিল-—“মােহন।”

 রামমােহন—“মা।”

 রামমােহন বিভার সেই সরল আনন্দে পরিপূর্ণ, হাসি হাসি মুখখানি অনেক ক্ষণ দেখিয়া ম্লান মুখে কহিল—“মা তুমি আজ আসিলে?”

 বিভা তাড়াতাড়ি কহিল-“হাঁ, মােহন। মহারাজ কি ইহারি মধ্যে সংবাদ পাইয়াছেন? তুই কি আমাকে লইতে আসিয়াছিস্?”

 রামমােহন কহিল—“না মা, অত ব্যস্ত হইও না—আজ থাক্—আর একদিন লইয়া যাইব।”