পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৯৭

 রামমােহন থাকিতে পারিল না, কাছে আসিয়া কহিল—“মহারাজ, আপনার মহিষী—যশােহরের রাজকুমারী।”

 সহসা রামচন্দ্র রায়ের প্রাণ যেন কেমন চম্‌কিয়া উঠিল—কিন্তু তৎক্ষণাৎ রমাই ভাঁড় হাসিয়া রাজার দিকে কটাক্ষ করিয়া কঠোর-কণ্ঠে কহিল, “কেন এখন কি আর দাদাকে মনে ধরে না নাকি?”

 রামচন্দ্ররায়ের হৃদয়ে করুণার আভাস জাগিয়া উঠিয়াছিল, তথাপি রমাইয়ের কথায় তিনি নিষ্ঠুর হাস্য করিয়া উঠিলেন— তিনি ভাবিলেন—বিভাকে এখন মমতা দেখাইলে পাছে উপহাসাস্পদ হইতে হয়।

 বিভার মাথায় একেবারে সহস্র বজ্রাঘাত হইল—সে লজ্জায় একেবারে মরিয়া গেল—চোখ বুজিয়া মনে মনে কহিল—মা গাে, বসুন্ধরা, তুমি দ্বিধা হও! কাতর হইয়া চারিদিকে চাহিল—রামমােহনের মুখের দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিল!

 রামমােহন ছুটিয়া আসিয়া সবলে রমাই ভাঁড়ের ঘাড় টিপিয়া ধরিয়া তাহাকে ঘর হইতে বাহির করিয়া দিল।

 রাজা ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন—“রামমােহন, তুই আমার সম্মুখে বেয়াদবি করিস্!”

 রামমােহন কাঁপিতে কাঁপিতে কহিল—“মহারাজ, আমি বেয়াদবি করিলাম! তােমার মহিষীকে আমার মাঠাকরুণকে বেটা অপমান করিল—উহার হইয়াছে কি, আমি উহার মাথা মুড়াইয়া ঘােল ঢালিয়া সহর হইতে বাহির করিয়া দিব, তবে আমার নাম রামমােহন!”

 রাজা রামমােহনকে, ধমক দিয়া কহিলেন—“কে আমার মহিষী? আমি উহাকে চিনি না!”

 বিভার মুখ নীল হইয়া গেল, সে মুখে আঁচল চাপিয়া ধরিল, থর থর করিয়া তাহার সর্ব্বাঙ্গ কাঁপিতে লাগিল, ও অবশেষে কাঁপিতে