পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

কাঁপিতে বিভা মূর্চ্ছিতা হইয়া ভূমিতে পড়িল। তখন রামমােহন যােড়হস্তে রাজাকে কহিল—“মহারাজ, আজ চার পুরুষে তােমার বংশে আমরা চাকরী করিয়া আসিতেছি। বাল্যকাল হইতে তােমাকে পালন করিয়াছি। আজ তুমি আমার মাঠাক্‌রুণকে অপমান করিলে, তােমার রাজ্য-লক্ষ্মীকে দূর করিয়া দিলে—আজ আমিও তােমার চাকরী ছাড়িয়া দিয়া চলিলাম—আমার মাঠাক্‌রুণের সেবা করিয়া জীবন কাটাইব। ভিক্ষা করিয়া খাইব তবুও এ রাজবাটির ছায়া মাড়াইব না।” বলিয়া রামমােহন রাজাকে প্রণাম করিল ও বিভাকে কহিল—“আয় মা, আয়! এখান হইতে শীঘ্র চলিয়া আয়! আর এক মুহূর্ত্তও এখানে থাকা নয়।” বলিয়া বিভাকে ধরিয়া তুলিয়া আনিল। দ্বারের নিকট অনেকগুলি শিবিকা ছিল, তাহার মধ্যে একটিতে হতজ্ঞান অবসন্ন বিভাকে তুলিয়া, নৌকায় ফিরিয়া আসিল।

 বিভা উদয়াদিত্যের সহিত কাশী চলিয়া গেল। সেই খানে দান, ধ্যান, দেবসেবা ও তাহার ভ্রাতার সেবায় জীবন কাটাইতে লাগিল। রামমােহন যতদিন বাঁচিয়া ছিল, তাহাদের সঙ্গে ছিল। সীতারামও সপরিবারে কাশীতে আসিয়া উদয়াদিত্যের আশ্রয় লইল।

 চন্দ্রদ্বীপের যে হাটের সম্মুখে বিভার নৌকা লাগিয়াছিল, অদ্যাপি তাহার নাম রহিয়াছে—

“বৌ-ঠাকুরাণীর হাট।”